স্বপন রায়
হামসফর
স্বপন রায়
উর্দু হলো একমাত্র আধুনিক ভারতীয় ভাষা, যা প্রক্রিয়াগত এবং প্রযুক্তিগত ভাবে ভারতবাসীদের মুখের কথায় আর লেখার ভাষায় অনিন্দ্য হয়ে উঠেছে! মীর তকি বা মীর্জা গালিবের ফার্সিযুক্ত উর্দু এখনকার 'শায়র'দের হাতে অনেকটাই সাধারণ্যতা পেয়ে বিভিন্ন ধারায় বহমান।এখানে কিছু আধুনিক 'শায়র'দের অযোগ্য অনুবাদ আমি পাঠকদের কাছে তুলে দিলাম এই ভরসায় যে কেউ না কেউ এই মহান এবং সমৃদ্ধ ভাষার অভ্যন্তরে গিয়ে সঠিক অনুবাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়ভারটি নেবেন আর এটা না হওয়া অবধি উদার পাঠক’রা আমায় সহ্য করবেন এটা ভেবে যে, আমি সেই সামান্য অকিঞ্চিৎকর গেটকিপার মাত্র, যার হাতে 'লুভর'-এর দরজা খুলে যায় প্রতিদিন......
আমজাদ ইসলাম আমজাদের জন্ম ১৯৪৪ সালের ৪ অগাস্ট ব্রিটিশ-লাহোরে! আমজাদ পাকিস্তানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কবি তো বটেই সারা পৃথিবী জুড়েই উর্দু কবিতা’র রসিক’রা তাঁর গুণগ্রাহী! তিনি কবিতা ছাড়াও সাহিত্যে এবং টেলিভিশনের বিভিন্ন শাখার সৃজনশীল কাজে যুক্ত আছেন! তাঁর প্রকাশিত বইয়ের কয়েকটি হলোঃ ফিশার, উসপার, সাতোঁয়া ডর, বারিষ কে আওয়াজ, ইতনে খ্বাব কাহাঁ রাকখুঁ ইত্যাদি!
আমজাদ ইসলাম আমজাদের কবিতাঃ
........
১. উও জো গীত তুমনে শুনা নহি
মেরি উমর ভর কি রিওয়াজ থা
মেরি দরদ কি থি দাস্তাঁ
জিসে তুম হসিঁ মে উড়া গয়ে
অনুবাদঃ
১. সেই যে গান তুমি শুনলে না
আমার রেওয়াজ ছিলো সারাজীবনের
আমার ব্যথায় সম্পূর্ণ সেই গান
তুমি যা উড়িয়ে দিলে ,হেসে
.........................
২. মিলে কেয়সে সদিওঁ কে পিয়াস আউর পানি, জারা ফিরসে কহনা
বড়ি দিলরুবা হ্যায় ইয়ে সারি কহানি,জারা ফিরসে কহনা
অনুবাদঃ
কি ভাবে এমন সময়কাড়া গভীর পিপাসা জলের সঙ্গে বিলীন হলো,ব'লবে আবার?
খুবই প্রিয়ময় এই পুরোটা গল্প,ব'লবে আবার?
........................
৩. বন্ধ থা দরওয়াজা ভি আউর ঘর মে ভি তনহা থা ম্যায়
তুনে কুছ মুঝসে বোলা থা ইয়া আপ হি বোলা থা ম্যায়
অনুবাদঃ
বন্ধ ছিল দরজা, আর একলা আমি একাকী ঘরে
তুমি কিছু ব’ললে না কি আমিই ....
..................................
ওয়াসিম বারেলভি আধুনিক উর্দু ভাষার অত্যন্ত জনপ্রিয় কবি।”ফিরাক ইন্টারন্যাশনাল”পুরষ্কারপ্রাপ্ত এই কবি এখন “NATIONAL COUNCIL FOR PROMOTION OF URDU LANGUAGE” এর ভাইস চেয়ারম্যান, উত্তরপ্রদেশের বারেলি’র মধ্যবয়েসি এই কবির একটি কবিতা’র অনুবাদ এখানে রইল।
ওয়াসিম বারেলভি’র কবিতাঃ
.....
আতে আতে মেরা নাম সা রহে গয়া
উসকে হোটোঁ পে কুছ কাঁপতা রহে গয়া
ও মেরি সাম্নে হি গয়ি ঔর ম্যায়
রাস্তা কি তরহ দেখতে রহে গয়া
ঝুটওয়ালে কহিঁ সে কহিঁ বড় গয়ে
ঔর ম্যায় থা কা সচ বোলতে রহে গয়া
আধিঁও কে ইরাদে তো অচ্ছে না থে
ইয়ে দিয়া ক্যায়সে জ্বলতা হুয়া রহে গয়া
অনুবাদঃ
....
আসবে আসবে ক’রে আমার নামের মত কিছু রয়ে গেল
ওর ঠোঁটে কিছু যেন কাঁপতে কাঁপতে রয়ে গেল
ও আমার সাম্নে দিয়েই চলে গেল
আর আমি রাস্তার মত তাকে দেখেই গেলাম
মিথ্যেবাদীরা কোথা থেকে কোথায় চলে গেল
আর আমি শুধু সত্যি কথা ব'লে গেলাম
ঝোড়ো হাওয়ার ইচ্ছে মোটেই ভাল ছিল না
তবুও এই প্রদীপ কি ভাবে যেন নিভলো না,কি ভাবে যেন জ্বলেই গেল
....
রাহত ইন্দোরি’র জন্ম মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে ১৯৫০ সালে! উর্দু ভাষার প্রক্তন এই অধ্যাপক হিন্দি ফিল্মের গানও লিখেছেন!”উর্দু মে মুশায়রা” নিয়ে করা তাঁর থিসিসের জন্য তিনি PHD প্রাপ্ত হন, তাঁর ছাত্রদের কাছে রাহত ছিলেন প্রিয়তম শিক্ষক, তাঁর মেধাবী রসবোধ তাঁকে প্রিয় করে তুলেছে সবার কাছে! রাহতের একটি কবিতা ও তার অনুবাদ পড়া যাকঃ
ফয়সালা যো ভি হো মঞ্জুর হোনা চাহিয়ে
জংগ হো ইয়া ইশক হো ভরপুর হোনা চাহিয়ে
ভুলনা ভি হ্যায়, ইয়াদ রাখনে কে লিয়ে
পাস রহেনা হ্যায় তো থোড়া দূর হোনা চাহিয়ে
আপনে হাথোঁসে বনায়া হ্যায় খুদা নে আপকো
আপকো থোড়া বহুত মঘরুর হোনা চাহিয়ে
কাট গই হ্যায় ওম্র সারি জিনকে পত্থর তোড়কে
অব কোই হাথোঁমে কোহিনূর হোনা চাহিয়ে
অনুবাদঃ
সে যা মত দেয় দিক না, মেনে নিতেই হবে
প্রেম হোক বা যুদ্ধ, পুরোপুরি হোক তবে
মনে রখার কারণেই ভুলে যেতে হয় কিছুটা
কাছে আসবার কারণ দেখাতে দূরে যেতে হয় কিছুটা
খুদা হোক বা ভগবান, তোমায় গড়েছে নিজের হাতে
অহমিকা যেনো ঈষৎ তোমায় জড়িয়ে থাকে
পাথর কেটেই সারাটা জীবন কাটিয়ে দিলাম তবু
কোহিনূর ওই পাথুরে নারীর আঙুলে বিরাজ করুক!
…………………………
'ওল্ড দিল্লি স্কুল'-এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হলেন “দাগ দেহেলভি”! ওঁর আসল নাম নবাব মীর্জা খান,জন্ম ২৫ মে ১৮৩১, মৃত্যু ১৭ মার্চ ১৯০৫। “দাগ” ফার্সি বাহুল্য থেকে মুক্ত করে উর্দুকে আজকের ভারতীয়ত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ছিলেন! ”দাগ দেহেলভি” ছিলো তাঁর তখল্লুস(ছদ্মনাম),”দাগ”কে তাঁর সময়ের শ্রেষ্ঠ রোমাণ্টিক কবি বলা হত! পড়া যাক তাঁর একটি শের এবং তার অনুবাদ!
...
সাকি তেরি মেহফিল মে চর্চা হি নহি ময় কা
ইস সে তো বেহতর হোতা কুছ জিকর-এ-খুদা হোতা
দিল নে মুঝে তড়পায়া আখোঁ নে কিয়া রুসওয়া
আপনো সে হুয়া ইয়ে কুছ,বেগানোঁ সে ক্যায়া হোতা
গয়েরোঁ কি শিকায়ত পর ফুরকত কি হিকায়ত পর
গর তুম না খফা হতে তো কৌন খফা হোতা
মেহফিল মে শুনায়া থা আফসানে গম হামনে
ইলজাম ইয়ে রকখা হ্যায় খালওয়াত মে কহা হোতা
ফরিয়াদ-ও-ফুগান সে তুম এয় “দাগ” বুরে ঠহরে
কুছ ভি না কিয়া হোতা কুছ ভি না হুয়া হোতা
অনুবাদঃ
সাকি, তোমার মেহফিলে চর্চাই নেই মদিরার
এর চেয়ে তো নামগান করাই ভালো ছিলো
একে হৃদয়ঘটিত আঘাত আর চোখের ফিরিয়ে নেয়া
এ সবই তুমি আয়াসে করেছো অন্যে কি আর করবে
শুনবে যখন আমি কাছে নেই, ভাববে যখন না থাকা আমার গল্পগাছা
অভিমান মেশা রাগ তো হবেই, একটু আধটু হবেনা তোমার?
এই দুঃখ আমার ভরা মেহফিলে শুনিয়েছিলাম, তুমি অভিযোগ ক'রে ব'লেই ফেললে
একাকি তোমায় এসব কি আর বলা যেত না!
এই ফরিয়াদি চিৎকারে, হে দাগ, তুমি বদনামই তো হলে
যদি কিছু না করতে, ভাবো কিছুই তো হত না!
Tags:
অনুবাদ