বিউটি বিশ্বাস
আমার পীযূষ আমার বিশ্বাস
বিউটি বিশ্বাস
আমি বগুলার মেয়ে । ছোট শহর । বগুলা ও বহিরগাছি একই এলাকায়। নদীয়া জেলায়, অনেকে গেদে লাইন বলে থাকেন। সময়টা ১৯৯৪ সাল, আমি তখন সবে মাধ্যমিকে পড়ি। সেই সময়েই আমার সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় পীযূষকান্তি বিশ্বাসের। পরিচয়টা হয়েছিল পারিবারিক সূত্রে, আত্মীয় মারফত। শুনেছিলাম, ছেলেটি তখন দিল্লিতে কর্মরত, ভারতীয় বায়ুসেনা একজন সৈনিক । পাশাপাশি ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স ইন কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনে পড়াশোনাও করছে। জেনেছিলাম, ছোটবেলা থেকেই সে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র, ক্লাসের ফার্স্ট বয়। এয়ারফোর্সের মতো একটি দায়িত্বপূর্ণ চাকরির পাশাপাশি নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া, বিশেষ করে কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনের মতো একটি বিষয় নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা – ব্যাপারটা যে কতটা কঠিন, তা হয়তো বাইরে থেকে বোঝা যায় না। কিন্তু ওর ভেতরের জেদ, ওর কঠিন অধ্যবসায় আর নিষ্ঠা ওকে কীভাবে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, তার কিছুটা সাক্ষী আমিও থেকেছি। সেই গল্পই আজ বলতে বসেছি – আমার চোখে দেখা পীযূষের গল্প, আমাদের একসঙ্গে পথচলার গল্প।
প্রায় বছর ছয়েক পরিচয়ের পর, ২০০০ সালের ১৪ই জুলাই আমরা ঘর বাঁধি । খুব বড় আয়োজন ছিল না, একেবারেই ঘরোয়া পরিবেশে, রেজিস্ট্রি ম্যারেজের মাধ্যমে আমাদের চার হাত এক হয়েছিল। তখন আমার বয়স মাত্র ১৯, আর পীযূষের প্রায় ২৬। দেখতে দেখতে আজ প্রায় ২৫ বছর হতে চলল আমাদের একসঙ্গে পথচলার। এই দীর্ঘ সময়ে কত ঝড়ঝাপটা গেছে, কত আনন্দ-বেদনার মুহূর্ত আমরা ভাগ করে নিয়েছি, তার ইয়ত্তা নেই।
বিয়ের পর প্রথম কয়েকটা বছর আমাদের কেটেছিল দিল্লির পালাম অঞ্চলে। তখন ওর জীবনটা ছিল এক কঠিন রুটিনে বাঁধা। দেখতাম, সকাল সাতটা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত এয়ারফোর্সের ডিউটি। তারপর বাড়ি ফিরে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে বিকেল পাঁচটা থেকে শুরু হতো এমসিএ-র ক্লাস, চলত রাত নটা পর্যন্ত। ক্লাস থেকে ফিরে রাতের খাবার খেয়েই আবার বসতো পড়াশোনা করতে। প্রায় সারারাত জেগে চলত তার প্রস্তুতি। তখন অবশ্য আমিও পড়াশোনা করছিলাম, বি.এ (ব্যাচেলর অফ আর্টস) পড়ছিলাম। তাই বিয়ের প্রথম তিন বছর বলতে গেলে আমারও ছাত্রজীবনেই কেটেছে। আমরা দুজনেই যেন এক লড়াইয়ের সঙ্গী ছিলাম – ও লড়ছিল ওর কেরিয়ার আর উচ্চশিক্ষার জন্য, আর আমি আমার স্নাতক ডিগ্রি শেষ করার জন্য।
সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয় ছিল, পীযূষ কিন্তু এমসিএ পড়ার জন্য কোনো রকম টিউশন বা কোচিং-এর সাহায্য নেয়নি। সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায়, প্রচণ্ড পরিশ্রম করে পড়াশোনাটা চালিয়ে গিয়েছিল দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। ওর নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস ছিল প্রবল। হয়তো সেই আত্মবিশ্বাসের জোরেই ২০০৫ সালে ও এয়ারফোর্সের মতো একটি সুরক্ষিত সরকারি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছিল। সিদ্ধান্তটা নেওয়ার আগে ও কিন্তু ওর পরিবারকে কিছুই জানায়নি, পাছে তারা বাধা দেয়। একমাত্র আমিই জানতাম ওর এই পরিকল্পনার কথা। কারণ আমি তো ওর অর্ধাঙ্গিনী, ওর স্বপ্নের ভাগীদার। আমার ওর সিদ্ধান্তের উপর পূর্ণ বিশ্বাস ছিল। আমি জানতাম, ও যা করছে, ভেবেচিন্তেই করছে এবং ও সফল হবেই।
২০০০ থেকে ২০০৩ সাল, বিয়ের পর পালামে থাকার সময়েই দেখতাম, পীযূষ টুকটাক লেখালেখি করে। ডায়েরির পাতায় বা অন্য কোথাও হয়তো কিছু লিখত, কিন্তু সেগুলো কোথাও প্রকাশ করত না। আমার মনে হতো, হয়তো অফিসের কোনো বিধিনিষেধ ছিল, সরকারি চাকরিতে লেখালেখি প্রকাশের ব্যাপারে হয়তো কোনো অনুমতি লাগত। তবে ওর ভেতরের লেখক সত্তাটা যে তখন থেকেই সক্রিয় ছিল, তা আমি বুঝতে পারতাম।
সেই সময়ের একটা মজার ঘটনা মনে পড়ছে। একদিন আমরা গিয়েছিলাম মহাবীর এনক্লেভে, পীযূষের লেখা একটি কবিতা জমা দিতে। গন্তব্য ছিল 'কথাঞ্জলি' পত্রিকার সম্পাদক, শ্রদ্ধেয় দিলীপকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়ের বাড়ি। সেখানে সেদিন উপস্থিত ছিলেন শ্রদ্ধেয় গোপালচন্দ্র পাল মহাশয়ও। আমাদের দুজনকে একসঙ্গে দেখে উনি খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, "তোমরা কি ভাই-বোন?" শুনে আমরা দুজনেই খুব হেসেছিলাম। কেন জানি না, সেই সময়ে আমাদের চেহারার মধ্যে হয়তো সত্যিই কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যেত। আর শুধু চেহারায় নয়, অদ্ভুতভাবে আমাদের শরীর খারাপও হয় একসঙ্গে, আবার সেরেও উঠি প্রায় একই সময়ে! এই মিলটা আজও আছে।
মহাবীর এনক্লেভে তখন থেকেই আমাদের যাতায়াত শুরু হয়, মূলত 'কথাঞ্জলি' ও সাহিত্যবাসরের সূত্রে। কিন্তু ২০০৩ সালে পীযূষের এমসিএ শেষ হওয়ার পরই ওর পোস্টিং হয়ে যায় রাজস্থানের জয়সলমীরে। তখন আমার বি.এ ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা চলছে। সেই সময় আমি অন্তঃসত্ত্বা ছিলাম।পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরের দিনই আমি কলকাতা কমান্ড হসপিটালে ভর্তি হই। ২০০৪ সালের জুন মাসে সেখানেই আমাদের কোল আলো করে আসে আমাদের একমাত্র সন্তান, পুত্র ঋজুস্মিত। কলকাতায় প্রায় ন'মাস কাটিয়ে, ঋজুকে নিয়ে আমি আবার ফিরে যাই জয়সলমীরে, পীযূষের কাছে।
জয়সলমীর খুব ছোট একটা জায়গা, মরুভূমির মাঝে এক শান্ত, নিরিবিলি এয়ার ফোর্স স্টেশন। কিন্তু নির্দ্বিধায় বলতে পারি, আমাদের জীবনের সেরা কিছু সময় আমরা সেখানেই কাটিয়েছিলাম। চাকরির চাপ হয়তো ছিল, কিন্তু পরিবেশটা ছিল খুব শান্ত, জীবন ছিল ছিমছাম। আমরা সদ্য বাবা-মা হয়েছি, ঋজুকে নিয়ে আমাদের ছোট্ট সংসার তখন আনন্দে ভরপুর। ওই সময়টাতেই হয়তো পীযূষ একটু বেশি করে লেখালেখির সুযোগ পেয়েছিল।
জয়সলমীরের শান্ত জীবন অবশ্য বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ২০০৫ সালে পীযূষ এয়ার ফোর্সের চাকরি থেকে অবসর (প্রি-ম্যাচিওর রিটায়ারমেন্ট) নেয় এবং আমরা পাকাপাকিভাবে দিল্লিতে ফিরে আসি। শুরু হয় জীবনের আর এক নতুন দৌড় – কর্পোরেট জগতের দৌড়। পীযূষ একটি বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় যোগ দেয়। প্রাইভেট সেক্টরের চাকরি মানেই সময়ের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। কখন সকাল হচ্ছে, কখন বিকেল গড়িয়ে রাত নামছে, তার হিসেব রাখা মুশকিল। সপ্তাহের পাঁচটা দিন অফিসের কাজেই কেটে যায়। এই প্রবল ব্যস্ততার মধ্যেও পীযূষ কিন্তু ওর ভালোবাসার জায়গাটা ভোলেনি – ওর সাহিত্যচর্চা।
শনি-রবিবার এলেই দেখতাম, ওর মধ্যে অন্য একটা মানুষ জেগে উঠছে। সপ্তাহের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলে ও ডুব দিত ওর লেখার জগতে। আগে, বিশেষ করে মহাবীর এনক্লেভে আসার পর প্রথম কয়েক বছর, প্রায় প্রতি শনি বা রবিবার কোনো একদিন আমাদের বাড়িতে সাহিত্যবাসর বসতো। ওর সাহিত্যিক বন্ধুরা আসতেন, চলত কবিতা পাঠ, আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক, সঙ্গে চা-সিঙ্গাড়া। সেই দিনগুলো খুব আনন্দের ছিল। কিন্তু এখন কর্পোরেট জীবনের চাপ আর সময়ের অভাবে সেই ঘরোয়া আড্ডাগুলো অনেক কমে গেছে। আইটি প্রফেশনে অনেক সময় উইকেন্ডেও কাজ করতে হয়, থাকে ডেডলাইনের চাপ, থাকে ক্লায়েন্ট কলের তাড়া। মাঝে মাঝে দেখতাম, পীযূষ এই রুটিনে হাঁপিয়ে উঠছে, ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়ছে।
আসলে, পীযূষের ভালো লাগার জায়গা, ওর ভালোবাসার জায়গা হলো এই সাহিত্যচর্চা। লেখালেখি করা, বন্ধুদের সঙ্গে সাহিত্য নিয়ে আড্ডা দেওয়া – এটাই ওর প্রাণভরে নিশ্বাস নেওয়ার জায়গা, ওর বেঁচে থাকার অক্সিজেন। যখনই ও একটু সময় পায়, বা যখন কাজের চাপে একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে, তখনই ও ডুব দেয় ওর কবিতার জগতে। এটাই ওর 'স্ট্রেস বাস্টার'।
অফিসের কাজের সূত্রে ওকে বেশ কয়েকবার দেশের বাইরেও যেতে হয়েছে। আমেরিকা, লন্ডন – এইসব জায়গায় ও গেছে, কাজ করেছে। কিন্তু ওর মন পড়ে থাকতো এখানে, দিল্লিতে, ওর বাংলা ভাষার কাছে, ওর সাহিত্যিক বন্ধুদের কাছে। তাই বিদেশে পাকাপাকিভাবে থেকে যাওয়ার সুযোগ বা প্রস্তাব এলেও ও রাজি হয়নি। এই বাংলা ভাষার টান, এই সংস্কৃতির টান ওকে দেশছাড়া হতে দেয়নি।
পীযূষের কলম থেকে যে সৃষ্টিগুলো গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলো হলো – 'বাধা নয় রক্ত' (২০০৮), 'ঘুমঘর' (২০১৪) এবং 'আকাশচুম্বন' (২০১৬)। আমি ওর প্রতিটি সৃষ্টির জন্মলগ্ন থেকে সাক্ষী থেকেছি। ওর লেখা নিয়ে ওর উত্তেজনা, বই প্রকাশের আনন্দ – সবকিছুই আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। মনে পড়ে, 'আকাশচুম্বন' প্রকাশের পর দিল্লির বইমেলায় ও নিজে স্টল দিয়েছিল। সেই সময় আমি আর আমাদের ছেলে ঋজুস্মিত – আমরা দুজনেই পালা করে স্টলে বসতাম, বই বিক্রি করতাম। সেই অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। ওর সাফল্যকে নিজের সাফল্য বলে মনে হতো।
শুধু নিজের লেখা নয়, পীযূষ অত্যন্ত যত্ন ও মুনশিয়ানার সঙ্গে 'দেহলিজ' নামে একটি ওয়েব ম্যাগাজিনের সম্পাদনাও করে চলেছে। আমি দেখি, কত রাত জেগে ও পরের লেখা সম্পাদনা করে, পত্রিকার জন্য লেখা সংগ্রহ করে, লেখকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। ওর এই নিষ্ঠা সত্যিই প্রশংসনীয়।
ওর জীবনে সাহিত্য যেমন আছে, তেমনই আছে প্রযুক্তি। ও ওর প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে সাহিত্যের কাজেও লাগিয়েছে। ওর এই দ্বিমুখী প্রতিভার স্বীকৃতিও এসেছে। একদিকে যেমন ওর কাব্য প্রতিভা ও সম্পাদনার জন্য ও সাহিত্য জগতে পরিচিতি পেয়েছে, তেমনই প্রযুক্তি জগতেও ওর অবদান অনস্বীকার্য। ওর প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন হিসেবে ওর নামে তিন-তিনটি আমেরিকান পেটেন্ট রয়েছে, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়।
সাহিত্যের সূত্রে পীযূষের বন্ধুর সংখ্যা নেহাত কম নয়। ওর কাব্য প্রতিভা এবং অমায়িক ব্যবহারের কারণে ও সহজেই মানুষের মন জয় করে নিতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় প্রতিটা জেলাতেই ওর কোনো না কোনো সাহিত্যিক বন্ধু আছে। আমরা যেখানেই বেড়াতে যাই না কেন – সে শান্তিনিকেতন হোক, বর্ধমান, মালদা, বা ওর নিজের গ্রাম বহিরগাছি – সেখানে কোনো না কোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হবেই, আর একটা ছোট্ট সাহিত্য আড্ডা যেন অবধারিতভাবেই জুটে যায়! এই বন্ধুত্বগুলো ওর কাছে খুব দামি।
দিল্লিতেও ওর বন্ধুদের বৃত্তটা বেশ বড়। ইদানীংকালে ওর নতুন আড্ডার ঠিকানা হলো 'পিথ্রি'। এই নামটি তিন বন্ধু – পীযূষ, শ্রদ্ধেয় প্রণবদা এবং প্রাণজিদা – এঁদের নামের আদ্যক্ষর মিলিয়ে তৈরি। এটা কেবল একটা নাম নয়, এটা একটা সৃষ্টিশীল ও প্রাণবন্ত প্রয়াস। আমি দেখেছি, এঁরা তিনজন যখন একসঙ্গে কোথাও সাহিত্যচর্চা করতে যান, তখন প্রায়শই একই রঙের পোশাক পরেন – এটা তাঁদের বন্ধুত্বের আর ঐক্যের প্রতীক। এই 'পিথ্রি' গোষ্ঠী মাঝেমধ্যে আমাদের বাড়িতেও ছোটখাটো আড্ডার আয়োজন করে। আবার তাঁরা একসঙ্গে সাহিত্য সফরে বাংলাদেশ পর্যন্ত পৌঁছে যান! এই নিরন্তর আদানপ্রদান, এই সজীবতা পীযূষকে প্রাণবন্ত রাখে।
বাইরে থেকে পীযূষকে যতটা গম্ভীর বা চিন্তাশীল মনে হয়, আসলে মানুষটা কিন্তু ততটাই আড্ডাবাজ, মিশুকে আর খানিকটা হয়তো বাউন্ডুলে স্বভাবের। ওর মধ্যে একটা শিশুসুলভ সরলতা লুকিয়ে আছে। যখন অফিসের কাজের চাপে একেবারে হাঁপিয়ে ওঠে, তখন ওর 'স্ট্রেস বাস্টার' হলো রান্না করা। ও বেশ ভালো রান্না করতে ভালোবাসে। আবার কখনও হয়তো হুট করে প্ল্যান করে বসে – চলো, কোথাও থেকে ঘুরে আসি! ওর এই হঠাৎ বেরিয়ে পড়ার নেশাটা আমারও বেশ ভালো লাগে।
ও খুব ভালো গাড়ি চালায়। আসলে, আমার মনে হয়, মেধাবী মানুষেরা বোধহয় সবকিছুতেই পারদর্শী হয়। ওর এই ড্রাইভিং স্কিলের জন্যই আমরা অনায়াসে দিল্লি থেকে কলকাতা, বেনারস, লখনউ, পাঞ্জাব, জয়পুর, দেরাদুন, ঋষিকেশ – আরও কত জায়গায় নিজেদের গাড়িতে করেই ঘুরে এসেছি। এই ভ্রমণগুলো আমাদের জীবনে নতুন রঙের সঞ্চার করে।
যদি ওর ব্যক্তিত্বকে এক কথায় ব্যাখ্যা করতে হয়, তাহলে বলব – ওর মধ্যে প্রযুক্তিবিদের যুক্তিনিষ্ঠ মনন এবং কবির সংবেদনশীল হৃদয়ের এক আশ্চর্য সমন্বয় ঘটেছে। প্রবাসী বাঙালি হয়েও, সমস্ত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, দিল্লিতে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য কাজ করে যাওয়ার যে জেদ ওর মধ্যে দেখি, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।
দেখতে দেখতে আমাদের একসঙ্গে পথচলার পঁচিশটা বছর প্রায় কেটে গেল। এই দীর্ঘ সময়ে আমি ওকে দেখেছি একজন ছাত্র হিসেবে লড়াই করতে, একজন সৈনিক হিসেবে দেশের সেবা করতে, একজন প্রযুক্তিবিদ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে, একজন কবি ও সম্পাদক হিসেবে পরিচিতি পেতে, একজন স্বামী ও পিতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে। ওর জীবনের প্রতিটি বাঁকে, প্রতিটি চড়াই-উতরাইয়ে আমি ওর পাশে থেকেছি, ওর সঙ্গী হয়েছি। ওর সাফল্য আমাকে আনন্দ দিয়েছে, ওর ক্লান্তি আমাকে ব্যথিত করেছে।
ওর জীবনযাত্রা এক বহুমাত্রিক প্রতিভার নিরন্তর যাত্রা। আমি চাই, এই যাত্রা চলতেই থাকুক। ও সুস্থ থাকুক, ভালো থাকুক, ওর সৃষ্টিশীল সত্তা অক্ষুণ্ণ থাকুক। ওর স্বপ্নগুলো সফল হোক। আর এই যাত্রাপথে আমি যেন ওর পাশে এভাবেই থাকতে পারি – ওর বন্ধু হিসেবে, ওর সঙ্গী হিসেবে, ওর শক্তি হিসেবে। ওর আগামী জীবনের জন্য রইল আমার অফুরান ভালোবাসা ও শুভকামনা।
তাই তো, আমার পীযূষ আমার বিশ্বাস ।
Tags:
ক্রোড়পত্র