মোনালি রায়
জিন্দেগী জিন্দাবাদ
মোনালি রায়
" অ্যাংকলেট বুট্ পায়ে জমেছিল এতদিন যতটা মার্চ হাঁটছি আর হাঁটছি, হয়না শেষ তবু...."
আলাদা আলাদা রাস্তা একে অন্যের সাথে এমনিই মিলে যায় না, এর পেছনে ইউনিভার্স অথবা ইথার অথবা ঐন্দ্রজালিক থিয়োরির শলাপরামর্শ থাকে।
পশ্চিমবঙ্গের উদার গঙ্গার নরম ভিজে কোল থেকে দিল্লির মত এক পাথুরে শহরে আছড়ে পড়বার যে মানসিক ও আত্মিক ক্লেশ তা কোনও চাকচিক্য অথবা সুযোগে সাধনে মেটবার নয়।
বহুদিন ধরে প্রবাস দিল্লির পুরনো সমাধিস্থল, দূর্গ - দরগা থেকে বাউলিতে ঝুঁকে ইতিহাসের ধূলো আর ভুতের গন্ধ গায়ে লাগিয়ে আমার একার সময় যখন কোনওরকমে কেটে যাচ্ছিল তখন অযাচিত এক মেসেজ পাই ফেসবুক মেসেঞ্জারে, " কবিদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করায় অসুবিধা আছে? " মেসেজ প্রেরক - পীযুষকান্তি বিশ্বাস। সালটা সম্ভবত ২০১৬।
সে সময়ের ফেসবুক, মৃণাল সেন'এর সিনেমার কলকাতার মত। কম লোকজন আর দেদার শহর.... পরিচিত, আত্মীয় অথবা বাস্তবিক বন্ধুবান্ধবদের ধীরে সুস্থে খুঁজে পাওয়ার জায়গা।
এরপর, পীযূষের ডাকে দিল্লি হাট। বিজলিগ্রীলের বিশ্বস্ত নিমগাছের ছায়া। উন্মুক্ত টেবিল। চা। কবিতা। "দিল্লি হাটার্স" থেকে "দেহলিজ".... সে আড্ডা এখন আর না থাকলেও চলা অব্যাহত।
বন্ধু পীযুষ :
"আমাদের তবু ঘড়ির কাঁটার মত শুধু ঘুরে যাওয়া যান্ত্রিক দুপায়ে জমানো শেষ হয়ে গেলে মার্চ আবার ভরে দেওয়া হবে 'দম'..."
একসাথে অনেকটা সময় আমরা চলেছি। তুঘলকাবাদ থেকে ইশা খাঁ'র সমাধিস্থল.... মেট্রো, যমুনা, এক্সপ্রেস ওয়ে, কফিশপ। নিজেদের কথা নিজেদের মত করে বলবার জায়গা তৈরির জন্য লড়ে যাওয়া। পত্রিকার জন্য স্ট্র্যাটেজি ঠিক হয়েছে আবার রাগ অভিমান হয়েছে। বিরক্তি এসেছে। শব্দবিহীন ঝগড়াঝাটি হয়েছে। সমান্তরালে বন্ধুতা হয়ে উঠেছে পারিবারিক। 'দেহলিজ' এগিয়েছে।
সম্পাদক পীযুষ :
" সময়ের সমতলে দ্বিমাত্রিক ওরা কালের ঊর্ধে ওরা ওঠায়নি মাথা আরো দূরে, বহুদূরে মহাকাশ পারে ওদের সহোদর বুঝি এমনি আগ্নেয়গিরি ধোঁয়া ভরা আগুনে লাভা উগরায়..."
যখন প্রথম দিল্লি হাটার্স'এর আড্ডায় গিয়ে জুটলাম, তখন দীপঙ্কর দত্ত সদ্য মারা গেছেন। ওনার পত্রিকা 'শূন্যকাল' তথা 'জিরো আওয়ার' এর মত স্ট্রিক্টলি পোস্ট মডার্ন ওয়েবজিন সম্পাদনা করছে পীযূষ, দীপঙ্কর দা'র রেখে যাওয়া লিগ্যাসির এতটুকু হেরফের না করে।
পরে, ওর দক্ষ সম্পাদনা'য় 'দেহলিজ'কে জন্মাতে দেখলাম - ওয়েবজিন। বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি ভাষায় অনায়াস দিল্লির নির্যাস। পরে দিল্লির চৌকাঠ পেরিয়ে 'দেহলিজ' হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক।
হালে, পীযুষেরই সম্পাদনায় বই হিসাবে পাচ্ছি, একের পর এক 'নির্বাচিত দেহলিজ '।
লিপিকা'র পীযুষ
"দুদিকে বিকেল নিয়ে দৌড়ালো বাইক দুই চোখে স্বপ্ন নিয়ে একক সড়ক পুকুরে ডুবছে জলে রক্তিম সুরজ ফেসবুকে, হে যুবক সহস্র লাইক!'..... লিপিকা
"লিপিকা" পীযূষের ভবিষ্যৎ অথবা ভবিষ্যতের পীযূষ অথবা কবিদের ভবিষ্যৎ অথবা ভবিষ্যতের কবি - এ নিয়ে মাথা খারাপ না করেও বলা যায়.... কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হৈ হৈ করে তখনও এমন ল্যাবরেটরিতে বাজারে আংুলে ল্যাপটপে ফোনে মানুষের মগজে ছেয়ে যায় নি, যখন পীযুষের 'লিপিকা' জেগেছে।
তিলে তিলে পীযুষ গড়ে তুলেছে এই 'লিপিকা'কে - যে সাধনে আলপটকা কিছু শব্দ ছুঁড়ে দিলেও আস্ত কবিতা নির্মিত হয়।
এখন যখন আমরা আমাজন'এ, 'এ আই' জেনারেটেড কিচেন এপ্লায়েন্স অর্ডার করবার কথা ভাবছি, আমাদের কাছে 'লিপিকা'র প্রয়োজনীয়তা নিঃসন্দেহে স্পষ্ট। তবে এর পেছনে থাকা পীযূষের পরিশ্রম , অধ্যবসায় ও কৃচ্ছসাধন দেখেছি আমরা, ওর কাছের বন্ধু'রা।
দেবতা'দের দুই, তিন বা চারটে মাথা আর চার হাত, আট হাত, দশ হাত এমন কি হাজার হাত দেখেছি। জানি না পীযুষ কতগুলো হাত ও কয়টি মগজ নিয়ে কাজ করে!
"উল্টে হিমের চাদর
নতুন ব্রহ্মান্ড ফের জ্বলাবে নব উষা ভোের
নতুন সময়, নতুন টাইম, নতুন এক ডেট...."
আশা করি, 'এ. আই' আমাদের জন্য কর্মময় সুদীর্ঘ জীবন যাপন নিশ্চিত করবে..... পীযুষের কাজের গতি অব্যাহত থাকবে।
অর্ধেক শতাব্দী পেরিয়ে আসার পরেও পীযুষ অন্তত আরো হাফ শতক কাজেকর্মে ব্যস্ত থাকবে....জিন্দেগী জিন্দাবাদ।
( উদ্ধৃত পংক্তি' পীযূষের কবিতা 'দম' থেকে নেওয়া)
Tags:
ক্রোড়পত্র