সোনালী মিত্র
দেহলিজ কান্তি বিশ্বাস
সোনালী মিত্র
ইটকাঠকংক্রীট মধ্যবর্তী পথটুকুতে আরাবল্লীর পাদদেশে অপার বসন্ত, গন্তব্যে পৌঁছাতে চেয়ে চাঁদিফাটা রোদ্দুর কখনো বা হাড়হিম ধরানো তোমার- আমার শীতযুগ। দুধের থেকে মাখন ছেঁচে তোলার মতো বুকে বুক বেঁধে গুটিকতক সেই রোম্যান্টিসিজম বাসন্তিকাকে তুলে নিলেন। তাঁরা রাজধানীর অস্থির মায়োপিকে নিজেদের আবস্থান রাখলেন গ্লোবাল ফেনোমেনা। কলকাতায় সাহিত্য রসিক দেখলেন এই ডায়াস্পোরিক আন্দোলন যার কোন ম্যানিফেস্টো নেই আছে কিছু কিছু সিনড্রোম।
এতো ন্যাকামির কারণ
এই দেখেছো এতো গৌরচন্দ্রিকায় পাঠক ফাঁপরে পড়ছেন। না, না কোন প্রবন্ধ বা অনাবিল গদ্য রচনার উদ্দেশ্যে মোটেই কলম ধরলুম না। কিছু সত্যি, সত্যির পিছনের লড়াই, পাহাড় ভাঙার প্রচেষ্টায় কখনো গড়িয়ে পড়া আবার ও উঠে দাঁড়িয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শিরদাঁড়া নিয়ে অকাট্য সত্য বলতে আসা। সময় তখন বিগত শতকের প্রান্তে... গুটিকতক বঙ্গ সন্তান আরাবল্লীর ঊষর পাথুরে বুকে জাঠ - পাঠনদের শিককাবাব পেরিয়ে শ্যামলীমার বীজ বুনে দেওয়ার সাহসীকতা দেখালেন। সেই বীজ, চারাগাছ থেকে বর্তমানে মহীরুহ। আর এই সব মহীরুহকে জলমাটি দিয়ে যাঁরা এখনো পর্যন্ত সৃজন করে চলেছেন, বা বলা ভালো এই হল্লাবোল সময়ের মন্থন দন্ড হয়ে যে ক'জনের সামনের সারিতে অবস্থান তার মধ্যে পীযুষ বিশ্বাস অন্যতম। হ্যাঁ আজ তাঁর কথা বলতেই কলমের উত্থান।
তোমাতে-আমাতে
আরে বাবা পীযূষ বাবুর কথা বলতেই তো আসা, প্রথমে আসি আমার কিছু কথায়! কলকাতা থেকে দিল্লি, উড়ে এসে জুড়ে বসে অপরিচিতদের ভিড়ে বেশ কোণ ঠাসা হাঁসফাঁস জীবন যখন অতিষ্ঠ এমতাবস্থায় শ্রী বিশ্বাসের সাথে লেখালেখি সূত্রে আলাপ।মি: বিশ্বাসের মতো কিছু মানুষের স্নেহধন্যা তখন আমার পত্রিকা "মায়াজম " গড়গড়িয়ে চলছে । আর এই মানুষটির হাত ধরেই দিল্লির আনাচ - কানাচ, রানীমহল থেকে গালিবের গালিচা, কুতুবমিনার থেকে তুঘলকি মেজাজ সব চেনা হলো। ভালো থেকে মন্দ এবং মন্দের ভালোকে সুই-ধাগায় আমরা কয়েকজন সেলাই করে নিতে গিয়ে বুঝলাম কিশমিশ-বেদনা থেকেও আমরা আনন্দ খুঁটে নিতে শিখে গেছি। এই হলো আমাদের দিল্লির পীযুষ বিশ্বাস। তাঁর জন্মদিবস উৎসব বলে যে সবটাই ভালো ভালো লিখবো এমনটা একেবারেই নয়, হা হা সুযোগ যখন দোড়গোঁড়ায় তখন খানিক ভালোর মন্দ ও লিখবো বটে।
আগে ভালোর ভালো
পীযূষ দিল্লির মাটিতে দাঁড়িয়ে নিরলসভাবে সাহিত্যচর্চা ও সাহিত্য-সংগঠনের কাজ করে চলেছেন বহুদিন ধরে। তাঁর কাজ কেবল লেখালেখির গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে প্রযুক্তির সঙ্গে মেলাতে উদ্যোগী হয়েছেন—এটাই তাঁকে আরও অনন্য করে তোলে।
তিনি একজন দক্ষ ও সফল সংগঠক। দিল্লির মতো বহুভাষিক ও বহুজাতিক শহরে বাংলা সাহিত্যচর্চার পরিসর তৈরি করা এবং তা ধরে রাখা সহজ কাজ নয়। কিন্তু পীযূষ বিশ্বাস তাঁর একাগ্রতা, সাহস ও সুগঠিত চিন্তাভাবনার মাধ্যমে সে কাজটাই করে চলেছেন । তিনি নিয়মিত সাহিত্যসভা, কবিতা পাঠ, আলোচনা ও নানা ধরনের সাহিত্যিক কর্মসূচির সংযোজকের ভূমিকায় গড়ে তুলেছেন একটি সজীব সাহিত্যিক পরিমণ্ডল, যেখানে প্রাবাসে বাংলা ভাষা বাঁচে, বাঁচে সাহিত্যপ্রেম।
তাঁর আরও একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, যেটা সম্পর্কে হয়তো খুব বেশি লোক জানেন না, তা হলো প্রযুক্তি ও বাংলা ভাষার সংযোগ। তিনি একজন অ্যাপ ডেভেলপার হিসেবে এমন একটি বাংলা লেখার সফটওয়্যার বা অ্যাপ তৈরি করেছেন, যা বাংলা টাইপিংকে সহজ ও সুবিধাজনক করে তুলবে। এই অ্যাপটি বিশেষ করে আগামী প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে। বাংলা ভাষায় লেখালেখি করতে যারা আগ্রহী, তাদের কাছে এটি একটি কার্যকরী হাতিয়ার। বাংলা ভাষাকে প্রযুক্তির মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার এই প্রয়াস নিঃসন্দেহে যুগোপযোগী ও প্রশংসনীয়।
মি: বিশ্বাসের এই বহুমাত্রিক কাজ—সাহিত্যচর্চা, সংগঠন পরিচালনা এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে ভাষার উন্নয়ন—তাঁকে একজন যুগোপযোগী চিন্তাবিদ ও সংস্কৃতিসেবী করে তোলে। তাঁর কাজ নিছক ব্যক্তি উদ্যোগ নয়, বরং একটি বৃহত্তর সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অংশ, যেখানে বাংলা ভাষা নতুন প্রাণ পায়, নতুন দিগন্ত খোঁজে।আসলে পোকায় কাটা মানুষেরা কিছুতেই স্থির থাকতে জানেন না। এক ছিলেন দিল্লির দীপঙ্কর দত্ত। যাঁর পত্রিকা "শূন্যকাল" ছিলো ভিন্নধারার কবিদের আঁতুড়ঘর। কবি দীপঙ্কর দত্ত'র অকালপ্রয়াণের পর, সেই দায়ভার বর্তায় কবি পীযুষ বিশ্বাসের উপর। বেশ কিছু বছর পীযুষ বাবু সফলতার সাথে শূন্যকাল পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন। নতুন কিছু করার তাগিদে পরবর্তীতে জন্ম নেয় "দেহলিজ" পত্রিকাটি। যেটি সাহিত্যগুণ সম্পন্ন এবং নিজস্ব জায়গা তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছে, অবশ্যই পীযুষের দক্ষ সম্পাদনার কারণেই।
এই সময়ে দাঁড়িয়ে পীযূষ আমাদের মনে করিয়ে দেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য কেবল জন্মভূমির গণ্ডিতে বন্দী নয়—তার বিস্তার সীমানা ছাড়িয়ে, আন্তর্জতিক পরিসরেও গর্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে।
এবার ভালোর মন্দ
আসলে পীযুষ বাবুকে কোনদিন পুরুষ হিসাবেই ভাবিনি। এই রে পাঠক টেঁরিয়ে তাকাচ্ছেন নাকি! আরে বাবা, উনি পুরুষ অবশ্যই সমাজে সংসারে স্ত্রী'র কাছে। আমার কাছে মোনালি রায় - মৌমিতা মিত্র যেমন সখী-বন্ধু, পীযুষ ও ঠিক তাই। এখানে জেন্ডার নির্বিশেষ। যার সাথে চুলোচুলি করা যায়, রাগ দেখানো যায়, অভিমান করা যায়। আবার রাগ ভাঙাতে একবার ডাক দিলেই, "সোনালী অনেক দিন আমাদের দেখা হয়না" ব্যাস শুধু এটুকু বললেই হলো, রাগ গোলে জল। আসলে সম্পর্কটা এমনই, সেই ছেলেবেলার বেস্টফ্রেন্ডের মতো। কি পীযুষ দা ঠিক বলছি তো! হ্যাঁ মাঝেমধ্যে মতোবিরোধ অবশ্যই হয় কিন্তু আমরা পাশাপাশি গাছ ছায়া নিয়ে ছুঁয়ে আছি একে অপরকে।
নটে গাছটি মুড়ালো
কবিতার কাছাকাছি থাকা মানুষদের আয়ু কমে না বরং বেড়ে যায়। অবশ্য কবিতার মধ্যে বেঁচে থাকা মোটেই সহজ কর্ম নয়। সারা জীবন সাধনা করেও কবিতার কাছে পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই অনেক ফুরিয়ে যান।কবিতায় জন্মদাগ রাখতে গেলে আগে তাতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করতে হয়। বর্তমানে মানুষের একান্ত সময়গুলি কমে যাচ্ছে, সেই ফিকিরে কবিতাও সরে যাচ্ছে দূর থেকে দূরে। অথচ শব্দএয়া থামতে জানে না বলেই কবির জন্ম হয়। পাহাড়ি বুকে বয়ে চলা ঝর্নার মতোই কবি বাড়তে থাকেন সকলের অলক্ষ্যে। কবি পীযুষ বিশ্বাস সহস্র জন্মদিন বুকে নিয়ে বেড়ে চলুন উচ্ছল ঝর্নার মতো। শুভেচ্ছা ও ভালোবাসাসহ প্রিয় বন্ধুর জন্য রাখলুম সম্মান ও অগণিত নক্ষত্রআয়ু উপহার পরিয়ে দিলুম তাঁর গায়।