ভাগ্যধন বড়ুয়া
ছায়া অবয়ব
ভাগ্যধন বড়ুয়া
ঘর হতে বের হলে ঘরে ফেরা যায় না আর!
পরিজন ঘরে ফিরে, জনান্তিকে কথা আর ছবি তার
কুশলে জানার ছিল বিবিধ বিষয়, বাকি থাকে!
শেষ কথা প্রতিধ্বনি দেয়ালে খেয়ালে অথচ নীরব
শ্বাস ছেড়ে গেলে ঘর লাগে কি আর? পুরোটাই ঘর
নিশ্বাস নিয়েছি বহু, চিৎকারেও থাকে না কেউ শেষে
শ্বাস ছেড়ে গেলে আশ বাড়ে নাকি? আশ্বাস অশেষ...!
জীবনের জয় নাকি পরাজয়, অহেতুক তর্ক চলে
সম্পর্কের আঁকা রেখা বাঁকা-সোজা, খোঁজে না কারণ
পাশাপাশি যাত্রাপথ ভিন্ন মত নিয়ে অভিমান অভিযোগ
একসময় থামে, নাই কোলাহল, কোন কথা নেই,
অমাবস্যা নাকি?
ঘরের ঠিকানা ঠিক, মানচিত্রে বেদখল ঘর,
ফেরা হলো না আর!
বিনা নোটিশে যারা ছেড়ে যায় তাদের খোঁজ নিতে হয় পথে
সীমানা পর্যন্ত অভিকর্ষ টান তারপর পরিভ্রমণ শূন্যে ...
হাতের ইশারা নেই চোখের নিশানা নেই কোথাও পরিধি নেই
লোকালয়ে জমা কথা ঘুমচোখে জেগে ওঠে,
জানায় একদা ছিলাম তোমাদের মাঝে....
কে যেন বললো পথে, আয়ুরেখা ধরে ঘরে যেতে হয়
কার ঘর? কোন ঘর? ঘর চেনা মুশকিল বিষম সময়ে
একদা আকুতি ছিল, মিনতি করেছি বহু, এখন নিরব
যার যার মতো ফিরে যায় ঘরে, পড়ে থাকে ছায়া অবয়ব
শব্দ ও অনুভব
গভীর রাতে গভীর বেদনায় শব্দগুলো জাগে
নাড়ির শব্দ অতিক্রম করে ধ্যানে বসে
শ্বাসের ধ্বনি শরীর সীমান্ত ছাড়ে
বিড়বিড় করে কী যেন বলে!
সমুদ্র তলদেশ ছেড়ে পর্বত শিখর অবধি
প্রলম্বিত শব্দসব টাঙানো আছে
ব্যক্ত করে আলোছায়া বোধির জ্যোৎস্না
আমার অনুভব তোমার প্রকোষ্ঠে উচ্চারণ!
জীবনের বাঁকে বাঁকে বাঁশীর অসংখ্য রন্ধ্র
কারও ফুঁ'তে সুর ওঠে কারও কারও কসরত
স্থবিরতা মনে হয়, আসলে অপেক্ষা...
কখনও নক্ষত্রজ্যোতি কখনও পরিণতি পতন!
উত্তরাধিকারে ভাসানো শব্দ রক্তকণা কোষে
কৃতজ্ঞতায় মনে জাগে গভীর নির্জনে টাঙানো ছবি
সময়ের জলে ভেসে এসে দাঁড়ালে, প্রশ্রয় চাহনি
বর্ণমালা বুকে নিয়ে হামাগুড়ি দিতে ঘুম ভাঙে
গভীর রাতের স্বপ্ন নাকি সত্যি হয়!
শব্দ-অনুভব জড়িয়ে ঘুমায় আমার বিছানায়...
বিদায়ী আলিঙ্গন
এই দেখা যদি শেষ দেখা হয় আমাদের!
গভীর অবলোকনে অনুভবে রেখে
নীরবে আঁকি মুখরেখা কলিজায়
একই বিষুবরেখায় দূরত্ব বহুত, মনে অভিঘাত!
আড়ষ্টতায় কথা নেই,চোখাচোখি নির্নিমেষ
কুশল সংবাদ নিবে কি? লুকোচুরি, না দেখার ভান
গোপনে ঘূর্ণন চলে লুপ্তপ্রায় আকরিক স্মৃতি
খননে উজ্জ্বল আরও দরোজায় হাজির...
এই দেখা যদি আর কখনও না হয়
মিলনপর্বের পর বিরহে কী কথা হলো?
কেন আলিঙ্গনে জড়ানো হাত ছাড়াতে দীর্ঘবিলম্ব
স্বাক্ষী শুধু দেহ-মন, ঘন শ্বাস, আরোপিত সূর্যছায়া...
প্রবাহ বাতাস বলেছিল কি এই শেষ দেখা?
আকাশমুখি বৃক্ষ ছায়া প্রলম্বিত করে কী বলেছিল?
কোন মানে খুঁজতে যাইনি আমি,শুধুই হৃৎকম্প শুনেছি
আমার প্রদত্ত কথা তোমার সমীপে জমা থাক,
ভোলে যেও তোমার আসন্ন বসন্তে...
আর দেখা যদি না হয়;
আমাদের বলা শব্দগুলো মিশে যাবে কি বাহিত হাওয়ায়?
তরঙ্গিত ফেনা চরের বুকে এসে যেসমস্ত কথার স্বাক্ষী হয়েছিল
মনের চোরাস্রোত কি সমুদ্রের চোরাবালিতে আটকায়?
গাঙচিল জানে সব, সূর্যাস্তের লাল আভায় ভোলে গেলে ভালো
কেউ আর না জানুক, আমাদের বিদায়ী আলিঙ্গন ক্ষণ!
পুনশ্চের মতো লেখা অবশিষ্ট অনুভব স্নায়ুকোষে বোবা...
Tags:
সিরিজ কবিতা