রীনা ভৌমিক

রক্তাক্ত হৃদয়ের গল্পগাছা 

রীনা ভৌমিক




সমুদ্র তীরে দাঁড়িয়ে তরঙ্গ বিক্ষোভ দেখি । নিজেরই তরঙ্গ । কিছুতেই বশ মানে না । সে বারবার ঘূর্ণিঝড়কে আমন্ত্রণ জানায় কেন যে বুঝিনা । আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মনপুঃত না হ‌ওয়া নিজেরি ছবিকে ভ্যাংচায়। যেন এক জাম্পেশ বিনোদন । একটা বিরাট সাপ সিঁড়ির লুডোর ছক । নিজেকে নিয়েই মেতে ওঠা । কখনো সিঁড়ির ধাপ ধরে তরতর, এই বুঝি স্বর্গের অমৃতফল পেড়ে ফেলি টপ করে ! পরক্ষনেই, কিছু বোঝার আগেই অজগর ধীর লয়ে গিলে ফেলে সমস্ত অস্তিত্ব । আমি নিকষ অন্ধকারে গড়াতে গড়াতে কিছু একটা ধরতে চেষ্টা করি হাতের মুঠোয় । অন্ধকার আঁচড়াতে আঁচড়াতে ক্লান্ত যখন একফোঁটা জোনাকি আলোর পিপাসায় গলা শুকায় , ঠোক্কর খেতে খেতে সাপের লেজ পর্যন্ত , ঠিক তখনি পাল্টে যায় পৃষ্ঠা । আবারো কে যেন সুকুমার রায়ের খুড়োর কলের মতো চোখের সামনে মেলে ধরে আলো চোঁয়ানো সিঁড়ি । আলেয়া জেনেও পাখা গজানো পিপিলিকার মতো একরোখা উড়ান ভরি সেই সিঁড়ির মায়ায়, আবারো রক্তাক্ত হবো জেনেই ।


নিরপেক্ষ আবেগে তাকিয়ে থাকি জীবনের দিকে । যেন তাড়া খাওয়া ক্ষুধার্থ বিড়ালের মরিয়া আতঙ্কিত জীবন । বাইরের অগোছালো আমির থেকেও এলোমেলো ভেতর মন । যতোবার তাকে গুছাতে যাই কোনো এক অবুঝ শিশু অনাবিল আনন্দে গুছানোর মুখে নুড়ো জ্বালিয়ে ছারখার করে দেয় । আমি আমার সঙ্গী জীবন কোষেদের সাথে নেগেটিভ মিটিং-এ বসি দুদ্দাড় । ঘনঘন । " আমার দ্বারা কিসসু হবেনা , বুঝলে ? " ওরা বোঝে কি না বুঝিনা । কিন্তু আমি খুব বুঝি , কোথাও যেন বিরোধাভাস রং তুলিতে প্রতিবাদের চিনগারি নিয়ে খেলছে !


একদা আমার‌ই একগুচ্ছ ইচ্ছে ধামাল করেছিল । একগুচ্ছ ইচ্ছে, তাদের সমস্ত ঝকঝকে অস্ত্র আমার হৃপিৎন্ডে একসাথে খোঁচা মেরে প্রশ্ন করেছিল , "আমরা কেন এভাবেই শুকিয়ে মরে যাব ?" আমি হৃদয় সড়কে যতদূর চলা যায় নিজেকে চালিয়ে সংগ্রহ করেছিলাম অসংখ্য এক্সকিউজ আর ব্লেম ! হৃৎপিন্ডের ইর্দ-গির্দ সশক্ত ঢালে দূর্গ গড়ে খুব হেসেছিলাম । ইচ্ছে তো ক্ষণস্থায়ী বুদবুদ । সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো। বরষার জলফোস্কার মতো । কি এসে যায় তাদের জন্ম ও মৃত্যুর সাত-সাতেরোয় ! তারপর দুঁদে জমিদারের মতো ভারিক্কি প্রশ্ন করেছিলাম,' কি চাও ?' উত্তর এসেছিল,'আত্মপ্রকাশ' ! হ্যাঃ !আত্মপ্রকাশ ! হাতি ঘোড়া গেল তল/ গাধা বলে কতো জল ? "মেরে বশ কী বাত নেহি হ্যায় ইয়ারোঁ !" বলে, ঘুমাতে চলে গেছিলাম অন্দরমহলের মখমলি শয্যায় । আমি তো ঘুমিয়ে আছি । আজো । ওরা ঘুমায়নি বেশ বুঝতে পারি । এক একদিন রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় । বুকের অন্ধ তহখানায় ওদের আর্ত দীর্ঘশ্বাসের গুঞ্জন স্পষ্ট হয়ে ওঠে । ওরা আত্মপ্রকাশের পথ খোঁজার ক্রমে তীব্র জেহাদি মরণ কামড় বসায়। আর আমার বিধ্বস্ত হৃদয় দুরুহ ঢালের আড়ালে রক্তে ভেসে যায় !!