কৃষ্ণা মিশ্র ভট্টাচার্য

একটি নিও মডার্ন শুভেচ্ছা

কৃষ্ণা মিশ্র  ভট্টাচার্য




অনুজ প্রতিম দেহলিজ সম্পাদক, কবি পীযূষ বিশ্বাস এর অর্ধশতক উপলক্ষে একটি নিও মডার্ন শুভেচ্ছাপত্র কবির প্রতিঃ


দৃশ্যমান,জগতের বাস্তব, যাদুবাস্তব নির্মাণ বিনির্মাণ এর পরিসর ছুট বিস্তারিত বিভঙ্গে। জানালার দৃশ্য অতিক্রম করত প্রিন্স ওব পার্সিয়া হুটহাট আত্মগরিমায় হোসলার কারুকাঠ।আকাশ এবং সকাল বিকালের লুপ্ত পথের ভাস্কর্যে কখনও উঠে আসে দিল্লিহাটের সিমেন্টের চবুতরা,নিম গাছের কালো মার্জারী ;রাণীদের মাংসল বুকের ভেতর থেকে কখনও বা ছিনিয়ে নিয়ে আসতে হয় চুম্বন-কখনও বা দুমড়ে মুচড়ে ভাইরাল হয়ে যায় শূন্যকাল।এরকমই কিছুটা তৈজস পত্র, আসবাবহীন বিকেলে কবিতাড্ডায় উঠে আসেন কবি পীযূষ বিশ্বাস এবং তাঁর স্থাপন অস্থাবর তরোয়াল -ধার মসীলিপ্ত কলম।

ঠোক্কর খেতে খেতে ভালবাসা আটকে যায় কুতুবের মিনারে;ইন্দ্রপ্রস্থের পতন হলে মহারাণী দ্রৌপদী আলপথ জুড়ে হেঁটে যান;মাটির গাগরি ভরে হস্থিনাপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম গঞ্জের কুঁয়োতলা থেকে জল নিয়ে ফিরে চলেন ডেরায়:এই সব বৃত্তান্ত গ্রাফিত্তির মতো উঠে আসে দেহলিজ এর শৃঙ্খল হীন গর্ভবতী ঝিনুকের মায়মুগ্ধতায়।শূন্য কাল এবং দেহলিজ--নিউজফিডের সাতরঙ সাঁতরে উঠে আসে সময়ের দেহলিতে।অ্যাকশন খতম হলে খাতাপত্র গুটিয়ে গার্ডেন ওব ফাইভ সেন্স ,কফি হাউস এবং ইন্ডিয়া হ্যাবিটেট সেন্টারে হল্লাবোল;শব্দের ভেতর অর্থ না অর্থের ভেতর শব্দ--হারবার সামনে রেখে খুঁজে ফেরা ভাঙা উপকূল।

গরম চায়ে চুমুক দিয়ে মুচমুচে পাঁপড় ভাজা খেতে খেতে কবির কবিতা পাঠ নীতি বিরুদ্ধ।
--"যতটুকু উপস্থিতি বুঝি
নিজেকে চেনার এক অভিনব প্রচেষ্টায়
প্রতিষ্ঠার মাপ থেকে নিজেকে ছোট করে ফেলি
দাড়ি ,কমায় আটোসাটো বেঁধে
গ্রাম,লিটার যা কিছু পরিমাপ যোগ্য
যে তাড়না আমাদেরকে রাস্তা থেকে গন্তব্যে ঠেলে নিয়ে যায়
যাত্রার প্রতিটা সেন্টিমিটার শিখে নেয়
কিভাবে আঁকা হয় এক্সট্রা জ্যামিতি
হায় ইঞ্জিন।"

এযেন খেলতে খেলতে অনেক দূরতক চলে আসা।আবার অন্য ভাবে বলতে গেলে উইলিয়াম জেমস এর কথায়--"the union of the mathematician with the poet ,fervor with measure,passion with correctness this surely is the ideal."

শিরা,ধমনী বেয়ে যখন কবিতা নেমে আসে,তখন অবশ্য ই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চেতনাস্তর ও পরিবর্তিত, পরিবর্ধিত হতে থাকে।কবিতার শরীর বদলে যেতে থাকে;বিষয়,বিষয়হীনতা ,সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা--এসব শব্দ বন্ধ গুলি ক্রমশই ফিকে থেকে ফিকেতর হতে থাকে;দাঁড়িয়ে থাকে আপেক্ষিকতা এবং সেই আপেক্ষিকতা থেকে দৃশ্য মান হতে থাকে বদলে যাওয়া বস্তু ভিত্তিক আদান প্রদান -যার সব টাই সচেতন ভাবে গড়ে ওঠে নিজস্ব প্রক্রিয়ায়।

যেমন ধরা যাক কবির -"বোতল"কবিতাটি
--"উগরিয়ে দেবার আগে সে প্লেটোনিক প্রেমের কথা ভাবছিল
যেভাবে সে গ্লাস কে ভেবেছিলো প্রেমিকা--
---
যে কোনও পানীয় আজ বোধহয় তরল নয়
কঠিন অবস্থানে যার গ্লাস আকার পেতে অসুবিধে,--
"ইত্যাদি-ইত্যাদি--


এভাবেই শব্দ এবং চেতনাস্তরের বদলে যাওয়া নিয়ে নিজের সঙ্গে খেলতে খেলতে একদিন কবি নিজস্ব পৃথিবীকে চিনতে শেখেন।এভাবেই খেলতে খেলতে কবিতার ভুবন বদলে যায় এবং আমি একজন সৃষ্টিশীল মানুষ হিসেবে মনে করি আমরা আজ যা বলছি হয়ত আরো কয়েক বছর পরে সেকথা গুলোও খেলতে খেলতে বদলে যাবে।সত্যি কথা বলতে কি কোনও কবির ই বোধহয় কোনও ম্যানিফেষ্টো হয় না। কোনও কবি র ই বোধহয় থাকে না কোন স্থা -ভূমি! কোন চিরকালীন ঠেক;


কোথাও কোনও এক কবি বলেছিলেন( নাম টা মনে করতে পারছি না--খুব সম্ভবত পড়েছিলাম অলোক বিশ্বাস এর -"কবিতা ক্যাম্পাস "এর কোনও সংখ্যায়)কবিতা এই মহাবিশ্বে--ই=এম সি স্কোয়ার --E=mc2 এই চেতনা হিসেবে ছড়িয়ে থাক।

এভাবেই কবি পীযূষ তাঁর কবিতায় বিচরণ করে চলেছেন। তাই পীযূষ অনায়াসে "কাঁটার উপর আঙ্গুল রাখতে " রাখতে কুঁয়োতলার ইক্ষু ক্ষেতে চলে যান;পান পাত্রে লিখে রাখেন,বেঞ্জিনের সমীকরণ;

তাই কবি নির্ধিধায় বলতে পারেন--"বিষয় বস্তুর ভিতরে ঢুকে মনে হলো পথ হারিয়েছি
ফিরে আসার চিহ্ন গুলি ধেবড়ে গেছে
পায়ে পায়ে--"

আবার কখনও কখনও বেভুল বলতে পারেন
--"আমি বারবার ভুলতে চাই এখানে একটা
ঝরনাতলা ছিল
কেননা আমি তখন ব্যকরণ পড়ছিলাম, 
আর হাতে ধরা ছিল ক্রেয়ন পেন্সিল--"


আজ পীযূষের অর্ধ শতকের জন্মদিনে দাঁড়িয়ে আছি ফুলের তোড়া নিয়ে--ভাই জিয়ো হাজারো সাল!
ক্রীজে থেকো শতক-শতক উত্তর -নট আউট! 


শেষ করি আমার নিজের একটি কবিতা উপহার দিয়ে ;একজন কবি আরেকজন কবিকে এ ছাড়া আর কি ই বা দিতে পারে?


কবির প্রতি কবি

একটা জন্মদিন এলেই আকাশের নীল আরো
গভীর, গাঢ়তর।
পঞ্চাশেও কবি পঁচিশ হতে পারে--
ভালবাসার প্রজাপতি হয়ে রঙিন ডানায় রচনা করতে পারে
একটি ফুলের বাগান
অথবা হয়েই তো যেতে পারে 
একটি একটি নীল ঘোড়ার সওয়ার
জরি বসানো বিকেল বেলার যাদুবাস্তব কে কেন্দ্র করে 
লিখেই ফেলতে পারে অবাস্তব কিছু 
 রূপালী পালকের দিন,যাপন
অথবা স্মৃতির আলোকে সাঁতার কাটতে কাটতে 
কবি তুলে আনতে পারে বাল্যকালের বল লোফালুফির বেনজির ঘাসজমি
সোনার কৌটোয় ভরে নিতে পারে রাক্ষসী রণীর
প্রাণভোমরা
দুই হাতের আঁজলা ভরে তুলে আনতে পারে ঝিনুক বেলা
অথবা খোলা গলায় গেয়ে উঠতে পারে রবি ঠাকুরের গান
--:প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে মোরে আরো আরো আরো দাও প্রাণ--

তোমার জন্য রইল বিস্তারিত সন্ধ্যার লাল 
আবীর ছড়ানো যোজন গন্ধা পথ
তোমার জন্য অজস্র মিথ ,
মিঠে রোদ আর আবহমানতার জোছনা সারেঙ্গী
চলে যাও সটান হেঁটে আশ্চর্য নদী নালা ভালবেসে 
 পাখিদের জাতীয় সঙ্গীত মুখরিত
আলপথে,রাজপথে,জাতীয় সড়কে

মুঠো ভরা গোলাপ শুভেচ্ছা সহ