অমলেন্দু চক্রবর্তী
বহির্বঙ্গের অন্যতম স্তম্ভ
অমলেন্দু চক্রবর্তী
সাহিত্যের সাগরে ডুবকি মেরে যাওয়া আরেক প্রবাসী বঙ্গসন্তান। পীযূষ বিশ্বাস, তার প্রতিনিয়ত নতুন আবিস্কার এর ঝোঁক। দেশ বিদেশে পাড়ি জমান। সবের মাঝে সাহিত্যের নির্মাণ জুড়ে দেয়। তাঁর রথটি নিয়েও দূরান্ত ছুটে চলা। একবার আমায় হঠাৎ ফোন, বিকেল বিকেল অমলেন্দুদা আপনি কোথায় আছেন ? একটু পরেই ধানবাদ ক্রস করব। কোথায় থাকবেন বলুন। ' ও হরি, ভায়া আমিতো আর ধানবাদে নেই। ব্যান্ডেল এ চলে এসেছি অনেক দিন হলো' ধানবাদে আপনার সঙ্গে দেখা হলো না দূঃখিত। ঠিক এরকম বিশ্বজিৎ বাগচী। রায়পুর যাওয়ার সময় ধানবাদ স্টেশনে। কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ফিরতাম। কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলায় তো দেখা হয় প্রতিবারই।
খুব বেশি দিন না হলেও নদীয়া জেলার সত্তরের দশক এর পর প্রথমার্ধে যার জন্ম। ১৯৯৩ সালে এয়ারফোর্সে যোগদান ও যেহেতু প্রযুক্তি প্রতি আকর্ষণ। সতেরো বছর বয়সে এয়ারফোর্সে কাজ করার পর তিনি এক নতুন দিগন্তে বাড়ালেন। তথ্যপ্রযুক্তি জগৎ নয়ডা র (infogain) কোম্পানিতে যোগদানের মাধ্যমে। ওনার আইটি কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০৮ সালে (Dell) কোম্পানিতে একজন আর্কিটেক্ট হিসেবে জয়েনিং ও পূর্ণ অভিজ্ঞতা লাভ (cloud in frastructure ) সঙ্গে যুক্ত হন। তাঁর জীবনের এ এক অন্যতম মাইল ফলক নতুন উদ্ভাবনের প্রতি গভীর অনুরাগী ছিলেন। ২০০৭ সালে প্রথমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান যান, ২০০৮ লন্ডনে এবং ২০১২ সালে আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে (রাউন্ড রকম) যাওয়ার সুযোগ হয়। এইভাবে ২০১৭ সাল থেকে "আইবিএম" কম্পানি তে ক্লাউড আর্কিটেক্ট হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। অত্যাধুনিক বিষয়ের ওপর কাজ করে চলেছেন সফটওয়্যার সিস্টেমকে স্বয়ংক্রিয়(Automat) করাই ওনার কাজে র প্রিয় অংশ ধরে নিয়েছেন।
এ ছাড়াও প্রজুক্তির পাশাপাশি আরো একটি গভির ভালোবাসার জায়গা হল বাংলা ভাষা ও কবিতা সবসময় তাড়িত করত বিশেষত কবিতা র ক্ষেত্রে। এবং এই ভাবনা থেকেই কিছু উদ্যোগ নিতে হয় তাঁকে
# শূন্য কাল(Shunyakal) বন্ধু দিবাকর দত্ত কে একটি ওয়েব ম্যাগাজিন তৈরিতে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা হয়
# দেহলিজ(Dehlij) পীযূষ বিশ্বাস নিজে একটি ওয়েব ম্যাগাজিনের ধারণা তৈরি করেন ।
# লিপিকা (Lipika) বাংলা ইউনিকোড টাইপ করার অসুবিধা দূর করতে তিনি লিপিকা নামে সফ্টওয়্যার তৈরি করেন। যাতে অনেকেরই বাংলা লেখার কাজ সহজ হয়।
# বাংলা ভাষার জন্য 'কম্পিউটার এইডেড পোয়েট্রি ' সফ্টওয়্যার তৈরি করা হয় উদ্দেশ্য একটাই প্রযুক্তি কে ব্যাবহার করে কবিদের কবিতা রচনায় সহায়তা করা নতুন আঙ্গিকে ছন্দ বা শব্দ পরিক্ষা-নিরিক্ষা করার সুযোগ করে দেওয়া।
এবার আসা যাক পীযূষ বিশ্বাস এর নিজের রচনায় । বিশিষ্ট সাহিত্যিক বারীন ঘোষাল মহাশয়ের অসামান্য আলোচনা। একেবারে শুরু থেকেই এরকমঃ
তোর "আকাশ চুম্বন" পড়লাম আজ। তারিয়ে তারিয়ে কী লিখেছিস ভাই। তোর ভিতর অনেক কথা জমে আছে। কবিতা লিখতে বসছি সে সব কথার ফুলঝুরি বেরিয়ে আসে কালার ফুল তুবড়ি র মতো। সুন্দর তপ্ত ধোঁয়াটে তোর আসেপাসের পৃথিবীর গেট খুলে যায়।। পোস্টমর্ডান টেডেন্সিএটা।তবছ এ্যাপ্রেসিয়েটিভ না ক্রিটিক্যাল। রেঞ্জ দেখে অবাক হই ।'জল জ্বলে ওঠে' কবিতাটার নামেই মালুম হচ্ছে।
জ্বলজ্বল শব্দটার নতুন ব্যাবহার দেখে কবির শ্রবণ নিয়ে আশ্বস্ত হলাম বিষয় বস্তুর ভিতর ঢুকে মনে হল/ পথ হারিয়েছি'....পড়ে মনে হল আমার বিষয়হীন কবিতার আর পথিক কবি কে পেলাম।... এই দু ঋতুর দিল্লি কে আমি কি লিখি/ ধোঁয়া শব্দটা লিখতেই /ভিতর থেকে আবছা আগুনের ফুলকি ছূটে আসে' । এই সেই আগুন যেটা তোর বুকে আছে। কবিতা লিখতে বসলে ফুটে উঠতে চায়। "বৃষ্টি ভাঙ্গা ধনুক"কবিতা র নামেই রামধনুর ছবি আছে। লিখেছিসও'.... তারও একটা রেনবো আর ইচ্ছে। //বৃষ্টি গুলি ভাঙি// আর আবিষ্কার হয় আমি/আমার মুখ/ এ ওর মুখে মুখ মাখছি '....... কয়েকটা দেয়াল আমাদের ঘিরে,।/একটি বৃত্ত এঁকে /আমাদেরকে সেট থিয়োরি পড়ে শোনাচ্ছে//আর বৃত্তটা বার বার দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাচ্ছে।' খুব কম কবিই এরকম ভাবে রামধনু থেকে সেট থিয়োরিতে আসতে পারে আবেগ কে সাইডট্র্যাক করে। ওয়ান্ডারফুল পীযূষ। "ঝরনাতলায়" কবিতাটায় আয়াতের কথা যাতায়াতের কথা... আসলে এটা হতে পারে প্রয়াণ- সংবাদের সাইড-এফেক্ট....কী সাজেশন করলি ওঃ...এই সন্ধ্যার নির্জনতায় আমার দিল ছবি হয়েগেল। .....আমি অনেক লাইনের মাঝে দু -লাইন বৃষ্টি লিখে দিলাম....আমি অবাক হয়ে যাই আর আমার মধ্যে কবিতা জারিত হতে থাকে কী লিখেছিস ভাইরে !
এভাবে আরো অনেক কবিতা...যেমন মিসলেনায়াস,অমৃতকুম্ভ --- এইসব আরো তৃপ্তি। চমৎকার। বইটা আমকে দেওয়ার জন্য ধন্যযোগ। ভালো থাকিস। সৃজনে থাকিস।
এই হলেন বারীন ঘোষাল। লেখা না পড়ে কখনো কিছুই বলতেন না । আর তরুণ লিখিয়ে দের আলোচনায় উৎসাহ তিনি একমাত্র সিদ্ধহস্ত ছিলেন। আমার কয়েকটি লেখা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় আলোচনা করেছেন। কৌরব , খনন , শহর ইত্যাদি।
এবার আমরা পীযূষ বিশ্বাস মহাশয়ের কিছু কথা তাঁর লেখা থেকে দেখে নিই । তিনি একজায়গায় লিখেছেন ' আমার জীবনের দুটি ধারা – প্রযুক্তি এবং বাংলা কবিতা – পাশাপাশি বয়ে চলেছে। এক দিকে যেমন ক্লাউড আর্কিটেকচার, সফটওয়্যার অটোমেশন ও নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনের নেশা, তেমনই অন্যদিকে বাংলা ভাষাকে প্রযুক্তি র মাধ্যমে আরোও সমৃদ্ধ করার, কবিতা লেখাকে আরোও সহজ ও আকর্ষণীয় করার চেষ্টা নিরন্তর এই দুইয়ের মেলবন্ধনেই আমার পথ চলা।
তাহলে পীযূষ ভায়ার মতো তেমন, কই আমরা পারলাম ! অত গভীরতা মাপতে। একটা সময় সব্বাইকেই স্যালুট সারতে হবে পীযূষ বিশ্বাস এর মতো সাহিত্যিক দের। তাঁর কাজের প্রতি ঋণী থাকতে হবে চিরকাল।
Tags:
ক্রোড়পত্র