সঞ্জীব নিয়োগী
পীযূষকান্তি, বাংলা ভাষার নিমগ্ন প্রেমিক
সঞ্জীব নিয়োগী
আমার, লেখালিখির জগতের ৯৯.৯৯% মানুষের সাথে দূর থেকে পরিচয়। পীযূষের সাথেও ছিল সেরকমই। কিন্তু ঘটনাচক্রে একবার তিনি যখন মালদা এসেছিলেন, আমাদের মুখোমুখি আলাপের সুযোগ হয়।
সেই আলাপের সূত্রে বুঝেছিলাম, পীযূষ আর পাঁচজন কবি বা লেখকের মতো শুধু নিজের রচনাখানি লিখেই তৃপ্ত নন। বাংলা সাহিত্য, বাংলা ভাষা নিয়ে তাঁর মিশন একটু অন্যরকম।
আর পীযূষকে এই "একটু অন্যরকম" করেছে তাঁর সাংগঠনিক অভিরুচি। দিল্লির সাহিত্য জগৎ পীযূষের সাংগঠনিক কাজকর্মের সাথে পরিচিত। এই বিশেষ সংখ্যায় অনেকেই পীযূষের সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে আলোচনা করবেন।
পীযূষকান্তির প্রাথমিক পরিচয় তিনি একজন কবি। তাঁর কবিতার বৈশিষ্ট্য, কীভাবে পীযূষের কবিতার ভাষা, চিত্রকল্প ও অভিপ্রায় আলাদা, পশ্চিমবঙ্গের বাইরের জলবায়ু দীর্ঘদিন সেবনের ফল কীভাবে তাঁর সাহিত্যে দেখা দিল, এইসমস্ত বিষয়ে নিশ্চিত ভাবেই যোগ্য লেখকগণ আলোকপাত করবেন। আমি সেইসব কথায় যাচ্ছি না।
আমি একটা এমন বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যা পীযূষকান্তি বিশ্বাস কে "অনেকটা অন্যরকম" করে দেয়। তাঁর যে কাজ বাংলা ভাষার প্রতি রোমান্টিক প্রীতি মাত্র নয়, এই কাজ বাংলার প্রতি তাঁর "ফলিত প্রণয়"।
কী সেই কাজ?
কাজটা হচ্ছে বাংলা ভাষাকে প্রযুক্তিগত সাহায্য। আজ আমরা প্রায় কেউই কাগজে কলমে লিখি না। লিখি কম্পিউটারে। আর কম্পিউটার চলে software উপর নির্ভর করে। বাংলা ভাষায় লেখার জন্য প্রযুক্তি যত উন্নত হবে, এই ভাষায় কাজ করা তত সহজ হবে। এই ভাবনা পীযূষ কে তাড়িত করেছে। তাঁর প্রযুক্তি-জ্ঞান তিনি নিবেশ করেছেন বাংলার ব্যবহারিক প্রয়োগ উন্নত করার কাজে। কাজটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখনীয়।
পীযূষকান্তি বিশ্বাস দুইভাবে কাজটা করেছেন।
এক, লিপিকা software: ইউনিকোডে বাংলা টাইপ করার যে সকল অসুবিধা তিনি লক্ষ্য করেছেন, সেইসব অসুবিধা যথাসম্ভব দূর করে Lipika software নামে এক প্যাকেজ উদ্ভাবন করেন।
আবার, আরও অভিনব এক সংযোজন করেছেন Lipika software এর অন্তরে। "Computer Aided poetry"। যা, শুধু উন্নত মানের বাংলা টাইপিং এর মধ্যে software টিকে সীমাবদ্ধ রাখে না, লিপিকার ভেতর AI (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) সমর্থিত এই বিশেষ সুবিধার দ্বারা একজন লেখক গল্প, গদ্য, কবিতা লেখার সময় বাড়তি সাহায্য পেতে পারেন। ইচ্ছে করলে এই সুবিধার সাহায্যে নিজের রচনাকে আরও সংহত, সুপ্রযুক্ত করা যাবে। সম্ভাব্য পূর্ববর্তী ও পরবর্তী শব্দের সাজেশন দেবে এই প্যাকেজ। কবিতার "মাত্রা" ঠিক করে দেবে, একাধিক অন্ত্যমিল সাজেস্ট করতে পারবে। বিভিন্ন বিকল্পের সুবিধা পাওয়ার ফলে লেখকের পক্ষে নিজের লেখার মনমতো রূপ দান করার অনেকগুলো রাস্তা খুলে যায়।
যে কোনও নতুন প্রযুক্তি ঘিরে নানান মতামত থাকে। টাইপিং software লিপিকা বা এই শ্রেণির software নিয়ে বিশেষ বিতর্ক থাকার কারণ নেই। যদি থাকেও, সেই বিতর্ক শুধু টেকনিক্যাল কোয়ালিটি অব্দি সীমাবদ্ধ। তার বেশি নয়।
কিন্তু AI সমর্থিত "Computer Aided poetry" কিংবা এই জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সাহিত্য সৃষ্টির কাজে ব্যবহারের বিষয়ে পৃথিবী জুড়ে বিতর্ক ও বিভিন্ন মতামত বর্তমান। কারণ প্রশ্নটি সৃজনশীলতার, তাই অনেকে মনে করেন, এর সাথে স্বাভাবিক ভাবেই এথিক্স এর বিষয়টি উঠে আসে।
আমি মনে করি, মানব সভ্যতা ও তার সমস্ত রকম সৃজনশীলতা যুগে যুগে নব নব আবিষ্কারের দ্বারস্থ হয়েছে ও সেগুলোর আত্তীকরণ করেছে বলেই মানুষের সৃষ্টি এক জায়গায় থেমে থাকেনি। তাছাড়া, একজন লেখক যখন সাহিত্য সৃষ্টি করছেন, তিনি তাঁর নিজস্ব মেধা, অভিরুচি, অভিপ্রায় আর প্রতিভার সম্মিলিত শক্তি দিয়ে সেই কাজ করেন। "মেশিন" তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করে না, তিনিই বিজ্ঞানের আবিষ্কারকে নিয়ন্ত্রণ করে প্রয়োজন মতো ব্যবহার করেন শুধু কাজটুকু আরও সহজ করার জন্য। এই কারণে নাতো লেখকের প্রতিভার অবনমন ঘটে, না রচনার।
পীযূষের বানানো "Computer Aided poetry" প্যাকেজটি ইচ্ছুক বা আগ্রহী কেউ নিজের মতো করে কাজে লাগাতেই পারেন। ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশের পথে এটাও একটা পদক্ষেপ।
Tags:
ক্রোড়পত্র