নলিনাক্ষ ভট্টাচার্য

যখন সন্ধ্যা নামে

নলিনাক্ষ ভট্টাচার্য


মার্চ মাসের এক সন্ধ্যায় প্রিয়াংশু সেন এবং তাঁর স্ত্রী সুরভির পঞ্চাশতম বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে পাড়ার কয়েকজনের সঙ্গে সস্ত্রীক আমিও হাজির হয়েছিলাম নয়ডার একশো চার সেক্টরে ফুড হেভেন রেস্তরাঁয়। রিটায়ারমেন্টের পরে দিল্লির সরকারি কোয়ার্টার ছেড়ে নয়ডার এই কলোনিতে ফ্ল্যাট কিনে চলে আসলে প্রতিদিন সন্ধ্যায় যাঁদের সঙ্গে ইভনিং ওয়াক করতে বেরোতাম তার মধ্যে প্রিয়াংশুদা ছিলেন আমাদের মধ্যমণি। ঠাট্টা ইয়ার্কি, রাজনীতি অর্থনীতি, এমনকি ধর্ম নিয়ে আলোচনা উঠলে তাঁর কাছাকাছি আমরা কেউ পৌঁছতে পারতামনা। গীতা তাঁর পুরো কন্ঠস্থই ছিলনা, প্রতিটি শ্লোকের ব্যাখ্যা করে শোনাবার ক্ষমতা ছিল তাঁর। পুরো কলোনির চারদিকে যে রিং রোড তা দু’বার প্রদক্ষিণ করে গেটে এসে সুবোধের দোকানে এসে বসতাম আমরা। ওখানে এক কাপ চা খেয়ে একটি সিগারেটে অগ্নিসংযোগ করে প্রিয়াংশুদা একটি লম্বা টান দিয়ে রবীন্দ্রনাথের বলাকা কিংবা সোনার তরী থেকে একটি কবিতা আবৃত্তি করে শোনাতেন আমাদের। তারপর যে যার ঘরে ফিরে যেতাম আমরা। ওঁর জন্মদিনে সুরভি বৌদি প্রিয়াংশুদার ভ্রমণসঙ্গী আমাদের চার জনকে ডেকে লুচি আলুর দম এবং অন্তত তিন রকমের মিস্টি খাইয়ে দিতেন।

কিন্তু প্রায় বারো বছর এভাবে মৌজ-মস্তিতে সময় কাটিয়ে দেবার পর একে একে আমাদের সান্ধ্য ভ্রমণের সঙ্গীরা শারীরিক অসুস্থতা এবং অন্যান্য কারণে বাইরে বেরোন বন্ধ করল। হাঁটুর অসহ্য ব্যথার জন্য সবচাইতে প্রথমে বসে গেল মৃগেন। এখন তাঁকে শুধু দেখতে পাই বাড়ির কাছের যথার্থ হসপিটালের আউটডোরে কারণ প্রতি তিন মাস অন্তর ফিজিওথেরাপি করতে ওকে আসতে হয় ওখানে। এর পরেই বসে গেলেন প্রিয়াংশুদা কারণ ওনার হাই সুগার আর প্রস্টেটের সমস্যাতো ছিলই, তার সঙ্গে এ্যালঝাইমার এসে যাওয়ায় সুরভি বৌদি ওনাকে বাইরে ছাড়তে চাইতেননা। সঙ্গে হাঁটুর ব্যথাও শুরু হয়ে গিয়েছিল ওনার। বাড়িতেই ফিজিওথেরাপি চালু হয়ে গেল। মনীন্দ্র আমাদের দল থেকে বাদ পড়ল ওর স্ত্রীর অকাল মৃত্যুর পরে। ও এখন বছরের বেশিরভাগ সময় থাকে পুণেতে ওর ছেলের পরিবারের সঙ্গে। আমি বীরুপাক্ষ চুয়াত্তর বছর বয়সে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সুদীপের সঙ্গে বাড়ির কাছের পার্কে একটু হাঁটাহাঁটি সেরে ক্ষুন্ন মনে ফিরে আসি বাড়িতে। হয়তো আর কিছুদিনের মধ্যে আমিও গৃহবন্দি হয়ে পড়ব এরকম আশঙ্কা আমার স্ত্রী শীলার মুখেও শুনেছি যখন ও ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে প্রতিবেশী মহিলার সঙ্গে গল্প করে কাপড় মেলতে মেলতে।

প্রিয়াংশুদা আর সুরভি বৌদির পঞ্চাশতম বিবাহ বার্ষিকীতে বহুদিন পর একত্রিত হয়েছি আমরা পুরনো বন্ধুরা ফুড হেভেন রেস্তরাঁয় এটা আমাদের সৌভাগ্য। এজন্য অবশ্য ধন্যবাদ দিতে হয় ওঁদের পুত্র কন্যা এবং জামাতাকে। ছেলে আদিত্য ছুটে এসেছে সুদূর আমেরিকার টেক্সাস থেকে আর মেয়ে উপমা এসেছে আবু ধাবি থেকে মা বাবার এই বিবাহবার্ষীকী অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে। ছেলেমেয়েদের উপস্থিতিতে ওদের বাবামা আরেকবার মালা বদল করলেন, আমরা করতালি দিলাম, তারপর দাদা-বৌদিকে সামনে রেখে আমদের অনেকগুলো ছবি তোলা হল। এইসব সুখের মুহূর্তগুলো পেরিয়ে যখন মহিলারা চলে গেল উপমা আর সুরভি বৌদির সঙ্গে তখন প্রিয়ায়ংশুদাকে একান্তে পেয়ে আমরা চারজন ওনার কাছে চেয়ার টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “ কেমন আছেন দাদা?” তিরাশি বছর বয়স্ক দাদা বয়সে আমাদের সবার থেকে বড় তাই ওঁকে আমরা সব সময় ‘আপনি’ সম্বোধন করে থাকি আর উনি আমাদের ‘ তুমি’ বলতেই অভ্যস্ত।

দাদা ক্লিষ্ট হেসে বললেন, “টিকে আছি ভাই এই পর্যন্ত। এই বাঁচা বাঁচতে হবে ভাবিনি কোনদিন। তা তোমরা কে কেমন আছও বলো।”

মনীন্দ্র বলল, “দাদা আপনার কাছে মিথ্যে বলতে পারবনা। প্রেশার ছাড়া শারীরিক তেমন কোন সমস্যা নেই, কিন্তু মানসিকভাবে একদম ভাল নেই।”

“কেন বউমা চা টা ঠিকমত দেয়না না কি?”

মনীন্দ্র বলল, “চা-তো আমি নিজেই করে খাই কিন্তু আমার সমস্যাটা অন্য জায়গায়। এত দেখেশুনে বিয়ে দিলাম ছেলেটাকে, ওদের একটা মেয়েও হয়ে গেল গত বছর কিন্তু স্বামী-স্ত্রীতে একদম মিল নেই। প্রায় রাতেই ঝগড়ার আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় আমার। মনে হচ্ছে ডিভোর্সের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে ওরা।”

“স্যাড, ভেরি স্যাড।” দাদা এবার তাকালেন মৃগেনের দিকে। “তুমি তো বেশ সোজা হয়ে ঢুকলে দেখলাম, নী রিপ্লেসমেন্ট করিয়ে নিলে নাকি?”

মৃগেন মাথা চুলকে বলল, “না দাদা, পায়ের হাড়ে ইঞ্জেকশন লাগিয়ে এসেছি কাল আপনার এখানে আসব বলে। মাস তিনেক একটু রিলিফ পাব, তারপর যে কে সেই। ফিজিওথেরাপি করতে করতে লাইফ হেল হয়ে গেল দাদা। মনে হচ্ছে নী রিপ্লেসমেন্ট করতেই হবে এবার।”

সুদীপ নিজে থেকেই বলল , “আমার তো দাদা পেসমেকার চেঞ্জ করতে হল। আগে ওটা দশ বছর চলত, এখন ডাক্তার জানলো আমার সুগার হাই থাকায় ওটা কারেন্ট বেশি টানছে, পাঁচ বছর চলবে। বিকেলের দিকে বীরুর সঙ্গে একটু হেঁটে আসি, বাকি সময় খবরের কাগজের পাতা ওল্টাই নইলে টিভির সামনে বসে থাকি।”

আমি সুদীপকে খোঁচা দিয়ে বললাম, “ওসবতো পুরনো খবর। নতুন খবরটা বলও দাদাকে।”

কাঁচুমাচু মুখে সুদীপ জানাল ওর স্ত্রী ওকে গাড়ি চালাতে নিষেধ করেছে তাই গাড়িটা বিক্রি করে দিতে হল ওকে অনেক কম দামে। প্রিয়াংশুদা বললেন, “ ওলা উবের জিন্দাবাদ, আমার গাড়িও তো গ্যারাজে পড়ে আছে তিন বছরের উপর, আদিত্য বলছে সামনের বার এসে ওটা ডিস্পোজ করে দেবে।”

দাদা এবার আমাকে বললেন, “তোমাকে আর কিছু জিজ্ঞেস করছিনা বীরু কারণ তুমি তো বাড়ি এসেই জানিয়ে যাও তোমার খবর। তা নতুন কি লিখলে টিখলে?”

আমি যে সময় কাটাবার জন্য টুকটাক কলকাতা দিল্লির কাগজে গল্প কবিতা লিখি সেটা দাদা জানেন। সাহিত্যে রুচি থাকায় ওনাকে একসময় নিয়মিত পত্রপত্রিকা দিতাম। এখন অসুস্থতার কারণে দাদার সাহিত্যে অনুরাগ কমে গেছে, এখন টিভি চালিয়ে বসে থাকেন সারাদিন। কখনো খেলা, কখনো রাজনৈতিক তর্ক বিতর্ক শোনেন কিংবা শোনেননা শুধু অভ্যাসবশে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকেন।

একটু পরেই খাওয়া দাওয়া শুরু হল। দাদার এখন হাত কাঁপে, তাই উপমা এসে দাদার গলায় বিব পরিয়ে স্পুন দিয়ে যত্ন করে টোমাটো স্যুপ খাইয়ে দিল, তারপর পেপার ন্যাপকিন দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “ বাপি নুডলস আর চিলি চিকেন আনব তোমার জন্য? না, তন্দুরি মাটন কারি খাবে তুমি?”

দাদা উদাস দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বললেন, “যাহোক কিছু আন একটা, আমার এখন জল ছাড়া কিছুই ভাল লাগেনা।”

উপমা আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল, “কাকুরা আপনারাও শুরু করুন, ডিশ সব রেডি আছে।”

আমরা গুটি গুটি এগিয়ে গেলাম খাবারের টেবিলের দিকে। আগে নিমন্ত্রনে গেলে প্লেট ভর্তি করে মাছ মাংস নিতাম এখন দু’খানা রুটি, দু টুকরো মাংস, একটু সালাদ নিয়েই টেবিলে এসে বসলাম। আমার তিন সঙ্গীও দেখলাম আমার মতই মিতাহারি হয়ে গেছে।

মৃগেন বলল, “হাঁটুর ব্যথাটা বেড়ে যাবার পর আর আগের মত খিদেও পায়না।”

সুদীপ বলল, “আমার ভালমন্দ খেতে ইচ্ছে করে কিন্তু ওখানে যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তিনি দেখলে এমন বকাবকি শুরু করবেন যে আমার পেট ভরে যাবে।” ওর স্ত্রী সোমা মহিলাদের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে যে মাঝে মাঝে ওর দিকে নজর রাখছে তা আমাদের চোখ এড়ালনা। মনীন্দ্র চার টুকরো মাংস নিয়েছে তাই আমার দৃষ্টি ওর প্লেটের দিকে গেলে ও বলল, “মনের অশান্তি তো মিটবেনা তাই খেয়ে পেটটাকে অন্তত শান্ত রাখার চেষ্টা করি।”

আমরা হো হো করে হাসলাম, দূর থেকে প্রিয়াংশুদা কাঁটায় নুডলস জড়াতে জড়াতে বললেন, “ এনজয় এ্যাজ মাচ এ্যাজ ইউ ক্যান, বয়েজ। দ্যাট উইল বী আ রিয়েল ট্রিবিউট টু মাই ফিফ্‌টিয়েথ ম্যারেজ এনিভার্সারি।”

আমার গিন্নি শীলা আমাদের হাসি শুনে আমাদের দিকে একটু অবাক চোখে তাকাল, তারপর আবার মহিলাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনায় মত্ত হয়ে গেল। ওরাও যে আমাদের নিয়েই কথা বলছে তা বুঝতে আমাদের কোন অসুবিধা হলনা। আর সেই আলোচনার সিংহ ভাগ যে ওদের বরদের শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে তাতেও কোন সন্দেহ নেই। ছেলেমেয়ে নাতি নাতনিদের কথাও উঠবে ওখানে তবে তার মধ্যে মাঝে মঝেই উঁকি দেবে আমাদের নানারকম রোগ পীড়া আর ভবিষ্যত চিন্তা। ওরা কি সত্যিই কেউ চায় আমাদের অবর্তমানে ছেলে মেয়ের অধীনে শেষ জীবনটা কাটিয়ে দিতে? মানসিক অশান্তি ভুলতে ওদেরও কি মনীন্দ্রের মত গ্লাটন হতে হবে? কে জানে?

একটু পরে আইস্ক্রিম নিয়ে আবার আমরা গিয়ে বসলাম প্রিয়াংশুদার কাছে। দাদার হাই সুগার তাই তাঁর জন্য উপমা নিয়ে এসেছে সুগারফ্রি কাস্টার্ডের একটি ছোট বোল। দাদা বললেন, “ তুই এবার যা তিতি, আমি এটা ম্যানেজ করতে পারব। এরাও আছে এখানে। গিয়ে দ্যাখ মেয়েরা যাতে সবাই ঠিক ঠাক খায়।”

উপমা চলে যাবার পরে দাদা হঠাৎ আমাদের সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “দিস ইজ মাই লাস্ট শো, বয়েজ। থ্যাংকস টু মাই সান এ্যান্ড ডটার। এরপর আমার সঙ্গে দেখা করতে হলে শ্মশানে যেতে হবে তোমাদের। অন্তিম নিবাস-এ।”

“কী যে বলেন দাদা!” প্রতিবাদ করল মৃগেন। “পায়ের ব্যথাটা একটু কমলে আপনার বাড়িতে গিয়ে . . .”

“একদম এসোনা। অসুস্থ লোক অসুস্থকে সান্ত্বনা দিতে আসলে দু’জনেরই অসুস্থতা বাড়বে বই কমবেনা কারণ আমাদের মধ্যে যে কথাবার্তা হবে তাতে মৃত্যুই বড় জায়গা পাবে। কী দরকার এরকম কথাবার্তার? নীরবতাই এখন ভাল। আর হ্যাঁ যাবার আগে আমাকে তোমরা কেউ দীর্ঘায়ু হবার অভিশাপ দিয়োনা। বরং মন্দিরে গেলে আমার দ্রুত মুক্তি কামনা কোরো তোমরা। বলতে লজ্জা করে আমার এখন পায়খানা পেচ্ছাব অনেক সময়ই ডায়াপারে হয়ে যায় নিজের অজান্তে।”

সুদীপ আর মৃগেন এরপর আর মুখ খোলার অবসর পেলনা। চুপচাপ দাদার দিকে চেয়ে রইল ওরা। আমিও চুপ ছিলাম, কিন্তু দাদা আমার হাতটা মুঠোর মধ্যে নিয়ে একটু চাপ দিলেন তারপর বললেন, “কী হে সাহিত্যিক তুমি কিছু বলবে?”

আমি বললাম, “দাদা আপনি এককালে কবিতা খুব পছন্দ করতেন, সুবোধের দোকানে বসে রবীন্দ্রনাথের অনেক কবিতা শুনিয়েছেন আমাদের। আজ অনেক কাল আগে লেখা আমার একটা কবিতার কয়েকটা লাইন শুনিয়ে দিই আপনাকে। কবিতাটার নাম দিয়েছিলাম ‘যখন সন্ধ্যা নামে।’”

যখন সন্ধ্যা নামে

খেলার সময় শেষ হয়ে এল

বন্ধুগণ এবার বাড়ি চল

ব্যাটবল গুছিয়ে নাও, ধুলো ঝাড় জামা প্যান্ট থেকে

ইচ্ছে হলে ঝাঁপ দিতে পার পাশের পুকুরে

শরীরের ঘাম, নোংরা সব ধুয়ে পরিষ্কার হয়ে যাবে

ক্লান্ত দেহে ঘরে ফিরে যাবার এইতো সময়

যখন সন্ধ্যা নামে, ফিরে যেতে হয় নিজের ঘরেই

খেলা শেষের চিরাচরিত নিয়ম মেনে।

প্রিয়াংশুদার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল। তাই দেখে ছুটে এল উপমা, ছুটে এলেন সুরভি বউদি। ওঁরা দু’জনেই আমার দিকে তাকালেন এমনভাবে যেন আমি কোন বড় অন্যায় করেছি।

উপমা বলল, “কী এমন শোনালে কাকু যাতে বাপির চোখে জল এসে গেলও? আজ বাপিকে আমরা সবাই একটু খুশি দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি . . .”

হাতের ইঙ্গিতে উপমাকে থামিয়ে দিয়ে, কাঁপা হাতে পেপার ন্যাপকিন দিয়ে চোখের জল মুছে প্রিয়াংশুদা বললেন, “বীরু আমাকে একটা কবিতা শুনিয়েছে। শোন তিতি, মেকি আনন্দের থেকে হৃদয় নিংড়ে যে দুঃখ বেরোয় তার মূল্য আমার কাছে অনেক বেশি। ওকে বরঞ্চ প্রণাম কর, ও আমাকে আজ যা তৃপ্তি দিয়েছে তোদের এই সব জাঁকজমক তা দিতে পারেনি।”

আমি দুহাত জোড় করে বললাম, “আমার অন্যায় হয়েছে বউদি, আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। একটু বেখেয়ালি হয়ে পড়েছিলাম। গুডনাইট দাদা, চলি।”

উপস্থিত মহিলারা আমার দিকে তাকিয়ে নিজেদের মধ্যে নিচু গলায় কী কথা বলল সেটা আমি শুনতে পাইনি কিন্তু বাড়ি ফেরার সময় শীলা আমাকে ছাড়লনা। বলল, “ওহ্‌ তোমাকে নিয়ে কোথাও গিয়ে শান্তি নেই আমার। সেবার সতুদার ছেলের বিয়েতে গিয়ে কী এমন একখানা বাঙাল ছড়া শোনালে শুনে সব চুপ মেরে গেল, মনে হল প্যান্ডেলে বাজ পড়েছে।”

আমি হাত জোড় করে বললাম, “তোমার কাছ থেকেও ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কোন অনুষ্ঠানে গিয়ে এখন থেকে আমি শুধু হাসব আর মাথা নাড়ব, ভাল মন্দ কোন কথা বলবনা। শুধু খাবার সময় মুখ খুলব আমি। তুমি নিশ্চিন্ত থাকতে পার।”

ভাঙা রাস্তায় অটোর ঝাঁকি খেতে খেতে বাড়ির দিকে এগোলে মনে হল আমার জীবনেও সন্ধে নামার আর তো বেশি দেরি নেই, কেন আর বিদায়সঙ্গীত শুনিয়ে অন্যকে অযথা দুঃখ দেওয়া। মানুষ মানুষকে ডাকে আনন্দ করতে আর সেটায় বাধা দেওয়া উচিৎ নয় আমার।