শুভদীপ মৈত্র
এফিশিয়নাডো

শুভদীপ মৈত্র
শব্দটা আমি পেয়েছিলাম হেমিংওয়ের লেখায়,
বুল ফাইটিংয়ের মৌতাতে মজে থাকা ভক্তদের বর্ণনায়।
অবশ্য এ টান যে কোনো কিছুর প্রতিই হতে পারে
অথবা যে কারো প্রতি। যেমন আমি হেমিংওয়েতে মশগুল
লেখা বা ফটোগ্রাফ বা কোথাও তাকে নিবে বেরনো আর্টিকল
এমনকি তার প্রিয় রান্নার রেসিপি পর্যন্ত সযত্নে জমাই।
যেমন রামকিংকরের ছবির সমস্ত প্রদর্শনীতে ঢুঁ মারে
আমার এক বন্ধু, আরেক পরিচিতকে দেখেছি
কী উৎসাহ নিয়ে ঝালিয়ে চলেছে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাস।
তুমিও এভাবে বেছে নিতে পারো পছন্দের কোনো কিছু
যা নিয়ে মেতে থাকবে জীবনভর
কবিতা, মদ, বৌদ্ধ তন্ত্রের আইকনোগ্রাফি।
বেঁচে থাকতে একটা পাগলামি লাগে,
পৃথিবীটাকে আমরা যারা বদলাতে পারলাম না
চোখের সামনে দেখলাম দু-একটা মোটা পকেটে
কী-ভাবে অনায়াসে সেঁধিয়ে গেল পরিশ্রমের আরক্ত ফসল,
ছিবড়ে মানুষের মতো আমরা যারা ছুঁড়ে দেওয়া ভার্চুয়াল জগত
লুফতে লাফিয়ে উঠে কাড়াকাড়ি করছি
তাদের একটা অন্তত নিজস্ব কিছু থাক।
একান্তে, প্রেমের গুজুর ফুসুরে মিশে যাক সে সব কথা
তীব্র বাদানুবাদ চলুক, উৎসাহী উন্মোচন
যেভাবে দৈনন্দিন রান্নাকেও স্বাদু করে তোলে দূরান্তের মশলার ফোড়ন।
হও এফিশিয়নাডো, হাঁটো ভিড়ের মধ্যে একা,
কখনোই ভিড়ের সঙ্গে নয়, আলগা, মনের ভিতর থাক
সময়ের তীব্র ঘৃণা ও অসহায়তার মাঝেও ভাললাগার মতো কিছু,
তোমার আমার ভালবাসার মুহূর্ত ছাড়াও বাকি প্রতি পলে
বেঁচে থাকা সহনীয় হবে।
সীমালঙ্ঘন
সৌন্দর্য্য নষ্ট হয়ে যায় গতানুগতিকে,
বসন্তের হঠাৎ বৃষ্টির মতো যা আচমকা
অথবা কালবৈশাখী
দেরাজে-রেখে-ভুলে-যাওয়া বোতলে
কয়েক আউন্স মদ আবিষ্কার
ঠা ঠা গরমের দুপুরে চালানো রাগ মলহার
ফোন বন্ধ করে কয়েকদিনের জন্য
কাজ ও অকাজের যোগাযোগ থেকে ডুব
এসব গোস্তাখির মধ্যে তোমায় নিয়ে যাব।
ক্রমশ বেরসিক হয়ে উঠছে চারপাশ
এমনকি বাচ্চারাও দেখছি অকারণ ডিগবাজি
খাওয়ার বদলে, টেবিলে লাফিয়ে ওঠার বদলে
চুপটি করে বসে যাচ্ছে মোবাইলের স্ক্রিনে
প্রশ্নহীন গণতন্ত্রে আমরাও মেনে নিচ্ছি
একটার পর একটা নিষ্ঠুর আইন পাশ।
এক তোড়া ফুল কিনে এসো তাতে আগুন লাগাই
বাসের কন্ডাক্টরকে লজেন্স ধরিয়ে বলি টিকিট দাও
স্বর্গ অথবা জাহান্নম যেখানকারই হোক।
ঝেলে যাওয়া, রেগে থাকা সহকর্মীকে
একটা চুমু খেয়ে দেখতে পারো
প্রেমিককে বলো তোমার বান্ধবীকে নিয়ে
ঘুরে আসতে কোনো নির্জন সৈকতে
প্রচণ্ড রাজনৈতিক তর্কের মাঝে চেঁচিয়ে
আবৃত্তি করো সুকুমার রায়ের যে কোনো কবিতা।
আমরা বিছানায় বসে খাবো
আর ডাইনিং টেবিলে আদর করব,
সারারাত কাটাব তারপর কৃষকদের গণ অবস্থানে
আমরা জোট বাঁধব অসহ্য নিস্পৃহ যাপনের বিরুদ্ধে।
তোমার আমার দেখা হয়েছিল ৬৮’র প্যারিসের বসন্তে
তারপর ৭১’এর ঢাকায় আমরা ভালবেসেছি বাংলা অক্ষরে
আমার ধনুকে গুন পরিয়েছিলে উত্তর বঙ্গের গ্রামে
সাহিরের নজমের ভিতর সেঁধিয়ে ছিলাম আমরা
তাঞ্জোর থেকে মাদুরাই দ্রাবিড় কাজাঘমে
বন্দুক গলিতে কবিদের সাথে বাংলার বোতল উড়িয়ে
আলোচনা করেছি রাইফেল ও কবিতার তুলনামূলক কার্যকারিতা।
এসো কালী দাশগুপ্ত আর নিনা সিমন্সে মিশে
তৈরি করি আমাদের কবিতা
এসো বিজ্ঞাপনের ছবি ফেঁড়ে এঁকে দিই গ্রাফিত্তি মাঝরাতে
পেশাদার রাজনৈতিকদের পাঠাই বৃদ্ধাশ্রমে
আর পৃথিবীর সমস্ত পাগলা-গারদের দরজা খুলে দিই।
শুধুমাত্র এই মুহূর্তের জন্য, মুহূর্তগুলো জুড়ে জুড়ে
অনিবার বর্তমানে আমরা থাকব, কোনো দিব্য উন্মাদনায় নয়
বরং মানুষের নিজস্ব অস্তিত্বের ‘ফানা’য় মশগুল।
Tags:
সিরিজ কবিতা