শ্যামল বিশ্বাস

ফিরে ফিরে দেখা 

শ্যামল বিশ্বাস লামশ্যা



সময়টা ২০২৩ এর নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ। খবর পেলাম দক্ষিণ দিল্লি কালী বাড়িতে বই মেলা চলছে। খুঁজতে খুঁজতে পৌঁছে গেছি বই মেলায়। ইতিপূর্বে কখনো দক্ষিণ দিল্লি কালী বাড়ি যাইনি। আমার এই প্রথমবার। কতৃপক্ষ যথাসাধ্য আয়োজন করেছেন। বই মেলায় ঘুরতে ঘুরতে একটা স্টলে দাঁড়িয়ে কবিতার বই দেখছিলাম। ওই মুহুর্তে যিনি স্টল সামলাচ্ছিলেন ততক্ষণে তিনি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বোঝালেন যে দিল্লির ৬৭ জন কবির কবিতা নিয়ে একটি সঙ্কলন। তাঁর এবং দিল্লির অন্য আরেকজন স্বনামধন্য কবি গৌতম দাশগুপ্তের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে। নাম জানতে চাইলে জানলাম তিনি দিল্লির কবি প্রাণজি বসাক। সেই সময় সেখানে একে একে অনেক কবি এসেছেন, যাদের কবিতা ওই সংকলনটিতে সংকলিত করা হয়েছে। কবি প্রাণজি বসাক যথাসম্ভব সকলের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তারই মাঝে একজন ছিলেন দিল্লির স্বনামধন্য একাধারে কবি ও সম্পাদক পীযূষকান্তি বিশ্বাস।আমি একজন কবিতা প্রেমী । কবিতা শুনতে এবং পড়তে ভালবাসি। এই প্রথম একসাথে এতজন কবি এবং সাহিত্যিকদের দেখতে পেলাম। আলাপচারিতায় ঋদ্ধ হলাম।


এরপর বেশ কয়েকবার কবি প্রাণজি বসাকের (মহাবীর এনক্লেভ, দিল্লি) ঘরে কবিতা পাঠের আসরে কবিতা প্রেমী হিসাবে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য হয়েছে। সেই সব আসরে প্রবাদপ্রতিম কবি গৌতম দাশগুপ্ত, কবি ও গল্পকার প্রশান্ত বারিক, কবি প্রণব দত্ত এবং কবি ও সম্পাদক পীযূষকান্তি বিশ্বাস প্রমুখদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পেয়েছি। কবিদের সৃষ্টি অতুলনীয় কবিতার স্বাদসহ প্রতিবারই লক্ষ্য করেছি সাহিত্য, সাহিত্যের কালভেদ, পাঠকের ওপর স্থানিক এবং অস্থানিক সাহিত্যের প্রভাব ইত্যাদি নিয়ে পীযূষকান্তি বিশ্বাস বলিষ্ট বক্তব্য রেখেছেন।আমি ভালোবাসায় পড়ে যাই।


ধীরে ধীরে এই কবিতা এবং সাহিত্য আমাকে তাঁদের অনেক কাছাকাছি পোঁছে দিয়েছে । তারই ফলস্বরূপ একসময় পীযূষকান্তি বিশ্বাস আমার কাছে লেখা চাইলেন তাঁর সম্পাদনায় কবিতা সঙ্কলনের জন্য। মনে মনে ভীষণ আনন্দিত হলাম ও গর্ব বোধ করলাম এই ভেবে যে দিল্লিতে এই প্রথম কেউ একজন আমার কবিতা চাইলেন তাঁর সঙ্কলনের জন্য । আমি যেসব কবিতা লিখি দিল্লিতে সর্বসমক্ষে পড়ার জোড়াল উৎসাহ পাই এবং ছাপার অক্ষরে পাঠকের সামনে পরিবেশন করেছেন পীযূষকান্তি বিশ্বাস। মহত মনের পরিচয় বারবার পেয়েছি। আমার প্রতি এই অবদান যথেষ্ট ।


আমার ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে, ২০২৪ শের ১৮ ই ফেব্রুয়ারী, রবিবার প্রাণজি বসাক ও মিতালি বসাক, পীযূষকান্তি বিশ্বাস ও বিউটি বিশ্বাস, প্রশান্ত বারিক,প্রণব দত্ত আমার দিলশাদ গার্ডেন , জে এন্ড কে পকেটস্থিত ঘরে সাহিত্য চর্চা ও কবিতা পাঠের আসর করেন। তাঁদের কবিতা পাঠ, সাহিত্য আলোচনা শুনে, দেখে মনে হয়েছে আমার ঘরটার অশুদ্ধি শুদ্ধ হয়ে গেছে। সমাজে বা জীবনে পথ চলতে অনেক অনেক মানুষ পাওয়া যায় বা সান্নিধ্যে আসে। কিন্তু ক-জন এমন পাওয়া যায় যার সাথে জীবনবোধ বা রুচির মিল থাকে? নিজের ইচ্ছের, পছন্দের প্রতিবিম্ব অন্যের মধ্যে দেখা যায়?


আবারও একই বছরের ২২ শে ডিসেম্বর আমার অনুরোধ রক্ষা করতে দিলশাদ গার্ডেন , জে এন্ড কে পকেটস্থিত ঘরে সাহিত্য চর্চা ও কবিতা পাঠের আসর করেন। এবারেও আসর ৫/ ৬ ঘণ্টা চলে। সেদিনই পীযূষকান্তি বিশ্বাসের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় “দ্রোহ দেহলিজ” তৃতীয় অধ্যায়। আমার ছোট্ট এই গৃহ আজ দিল্লির বাংলা সাহিত্যচর্চার এক স্মরণীয় তীর্থ হয়ে থাকল।অশেষ ধন্যবাদ জানাই সম্পাদক পীযূষ বিশ্বাসকে।


সেদিন এই তীর্থে বসে প্রাণজি বসাক সদ্য প্রকাশিত সংখ্যা থেকে আমার কবিতা “তুই তো আছিস, না?” দু দুবার উচ্চস্বরে পাঠ করেন। এই দেখে আমি ধন্য হয়ে গেছি। আমার জীবন সার্থক । এই ব্যাপারটাতে দিল্লির সাহিত্য জগতে আমার পরিবারসহ অমর হয়ে গেলাম। আমার বসার ঘরে, ছাদের উপর প্রায় প্রতিনিয়ত মনে এই কবিরা তাঁদের কবিতা পাঠ করছেন, সাহিত্য আলোচনা করছেন।


বলতে দ্বিধা নেই যে পীযূষের সান্নিধ্যে এসে বুঝতে পারি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চা শখের বিষয় নয় রীতিমতো সিরিয়াস একাগ্রতা আশা করে। পীযূষের ৫০ এ পদার্পণ আমাদের কাছে এক নবীন উৎসাহ প্রদান করে। ওর সুখসমৃদ্ধি ও দীর্ঘ জীবন কামনা করি।