শাশ্বত বোস

 



শাশ্বত বোস


এখন কেমন আছ সুতপা

ট্রায়াঙ্গুলার পার্কের পেছনে উন্মুক্ত, শান্ত,
কোন এক চায়ের দোকানে, তোমার দুচোখে
তখন দীঘল চাঁদের লুকোনো কার্তুজ!
ভিড় মেখে সরে যাওয়া সেই ঘুগনী কাকু,
যার মুখ দেখে অনুকবিতারা পাল তোলে
ফ্ল্যাটবাড়ির ছায়ায়, শুনেছি তাঁরও বাড়িতে
আধপেটা মেয়ে আছে। জন্মান্তরে হয়তো
সেও একদিন সুতপা হবে!
গোলগাল, কৃষ্ণাঙ্গী, সুলেখিকা!
ইদানীঙ সমুদ্রমন্থনে নীল তিমির রহস্য জানি।
তোমার সাথে শেষ দেখার পর এখন ওই পার্কটা
একলা পরে থাকে, ফুরিয়ে আসা সেদ্ধ মটরের
সুগন্ধটাকে বুকে করে, আস্তে আস্তে
ফকির হয়ে যাওয়া বিপ্লবের মত!
ঘুগনী কাকু ঘুগনী বেঁচে, মশলা মেশায়।
ঘাম আর থুতুর মাঝে
জীবন আর হিংসা পাশাপাশি শুয়ে থাকে কবরে!
তপ্ত বৈশাখে হয়তো একদিন শুনতে পাব
কবিতা লিখে তুমি পুরস্কার পেয়েছ!
দুর্ভিক্ষে তলিয়ে যাওয়া শীতল কবিতা জড়িয়ে,
এখন কেমন আছ সুতপা?




একটি উষ্ণ বিকেলের উপকথা

একটি খরতপ্ত বৈশাখী বিকেলে,
টং টং শব্দে ভেঙেচুরে যায় কবিতার সাঁকো।
আকণ্ঠ তৃষ্ণা মেটায় যে ঠান্ডা মটকিটা,
গায়ে তার শ্রমময় ঈশ্বরের ঘাম।
বিলম্বিত লয়ে সে গাড়িওয়ালাকে আমি
এক মুঠো ছাতু খেতে দেখেছি।
দীর্ঘ্যশ্বাসে নতজানু পারিবারিক দায়!
মহাকাল চেয়ে থাকে শুধু।
মফস্বলী গল্পে শব্দেরা ছুটে যায়।
টং টং টং!




অবেলার পঁচিশে বৈশাখ

একটা বাদামওলার পড়ন্ত স্বর, ভীড় ট্রামে-বাসে
দুবেলা শরীর ঠেলে উঠে যাওয়া পৌরুষের, কণ্ঠ
চাপা কান্না আর হোঁচট খাওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে,
আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ!
বললেন, “আর যাই কর, দোহাই তোমার, কাব্যের নামে
অসভ্যতা করো না! কাব্য তোমার জন্মভূমি!”
অলস নরম ভাবনার গভীরতায়
বাদামওলার দিকে তাকাই। একটা ডিপ নেভি ব্লু
রঙের কাক তখন হাত সাতেকের ট্রামলাইনে
মাথা পেতে দেয়।
আমার প্রাণের ভেতর চরম বিতৃষ্ণায়,
হিপহপ তালে বেজে ওঠে, “আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহ দহন লাগে।
তবুও শান্তি তবু আনন্দ তবু অনন্ত জাগে।।”
সম্পর্কের বেড়াজালে আটকে পড়া
একটা গাঢ় রঙের শব্দ, তখন হঠাৎ ব্রম্ভসঙ্গীত গেয়ে ওঠে।
ক্যালেন্ডারের তারিখ থেকে সংখ্যাগুলো খুলে এসে
ফুলদানীতে জড়ো হয়। মৃত সিঁড়ি অবসাদের
অর্থহীন মলাটের উপর, নিরুত্তাপ ভালোবাসায়
লিখে দিয়ে যায়, আজ ‘পঁচিশে বৈশাখ’।