উত্তম মাহাত

 ঘুড়ি



কল্পোত্তম



১১.

উড়তে উড়তে কোথায় শেষ হয় উড়ান
কোথায় শেষ হয় স্বপ্ন
সে হিসেব গোপাল রাখে।

দিনের হিসেব ভুলে যাই আমি রাতে,
আমার চৈতন্য প্রবাহ
মহা প্রবাহের মাঝে
এক একটা ধাপে
এক একবার পূর্ণ পরিবর্তন গ্ৰহণে
পরিত্যাগ করে পূর্ব গঠন, পূর্ব সংরক্ষণ।

মহা সংরক্ষণ-শালার কোথাও না কোথাও
সযত্নে সংরক্ষিত থেকে যায়
আমার বিপথগামীতার হিসেবও।


১২.

পারিপার্শ্বিক অনুকূল পরিবেশ
অনুকূল আবহাওয়ার বিভিন্নতায়
একেক জনের উড়ান একেক রকম।

ভূমি ছুঁই ছুঁই উড়তে থাকা আমাকে পাশ কাটিয়ে
শোঁ শোঁ করে চলে যায় কেউ
বাতাসের এক একটা স্তর ভেদ করে
মেঘের দেশে, পরীর দেশে।
অবাক হই না।


যত ওপরে উঠবে
তত ওপর থেকেই পড়তে হবে।
আমার মতোই
তুমিও টুকরো টুকরো কয়েকটা কাগজের
সযত্ন সংযোজনের
সমষ্টিগত উদ্যোগ।



১৩.

হাওয়ার দিক বদলের অপেক্ষা।
লাটাই হাতে কে দাঁড়িয়ে মাঠে?
অপেক্ষায় থাকতে থাকতে
পার হয় সময়,
দুপুর পার হয়ে বিকেল
বিকেল পার হয়ে সন্ধ্যা;
সূর্যাস্তের আগেই
উড়িয়ে নিতে হবে ইচ্ছামতো।

পরের দিন ওড়াবে
সেই সুযোগ আসার নিশ্চয়তা
ভূমন্ডলে নেই ঈশ্বরেরও।


১৪.

সুতো ছিঁড়ে গেলে
কোনো কাঁটাতার, কোনো গাছের ডাল
অথবা কোনো বিদ্যুৎ সংযোগে থাকতে হবে ঝুলে
তার পূর্বাভাস বুঝে ওঠার সক্ষমতা অর্জন
সম্ভব হয়নি।

পথ নির্ঝঞ্ঝাট হয় না কখনো।
কতকিছু এসে
ঘিরে ধরে রঙিন পথ,
ঘিরে ধরে ছায়া, আমাদের।

আমাদের সৃষ্টির উপাদান প্রয়োগ বুঝিয়ে দেয়
কতটা কাদা লাগার পরেও
নির্ঝঞ্ঝাট ওড়া যায়
বিকেলের রঙিন আকাশে।


১৫.

কেউ সাদা কেউ কালো
কারোর কারোর চামড়ার দাগ বলে দেয়
অনেক কলকব্জার মধ্য দিয়ে
পেরোতে হয়েছে কোনো এক সময়,
কোনো এক সময়
কারোর না কারোর ভালো মন্দের সংবাদ
পৌঁছে দিতে হয়েছে
এক হৃদয় থেকে আরেক হৃদয়ে।


লেগে আছে দাগ
লেগে আছে লিপি
নানা সভ্যতার নানা ইতিহাস
শরীরে, লেজে
পতপত করে ওড়ে
তোমার হাতে থাকা লাটাই-এর
কলাকৌশলে।